আয়না২৪ জাতীয়
বৃহস্পতিবার ফ্রান্স থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। আর এপ্রিলে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ জানিয়েছেন, এপ্রিলের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার স্পেস এক্স থেকে এটি উৎক্ষেপণ হবে।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মেসবাহুজ্জামান বুধবার বাসসকে বলেন, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস বৃহস্পতিবার সকালে ফ্রান্সের কানে অবস্থিত ওয়ারহাউস থেকে একটি বিশেষ কার্গো বিমানে করে স্যাটেলাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা পাঠাবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, উৎক্ষেপণের দায়িত্ব পাওয়া মার্কিন ফার্ম স্পেসএক্স ৩০ মার্চ উপগ্রহটি গ্রহণ করে উৎক্ষেপণের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করবে।
থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস কয়েক মাস আগে ৩ দশমিক ৭ টন ওজনের ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর প্রস্তুতের কাজ শেষ করে ফ্রান্সের কানে একটি ওয়ার হাউসে রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট সদস্য দেশের তালিকায় নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
এরই মধ্যে রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়েছে। মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় ১৫ বছরের জন্য এই কক্ষপথ কেনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, ফ্রান্সের কান টুলুজ ফ্যাসিলিটিতে এই বিশাল প্রকল্পের অন্যতম প্রধান অংশ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে নির্মাণের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম খ্যাতনামা স্যাটেলাইট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে। এটি তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর বিটিআরসির সঙ্গে টার্ন কি পদ্ধতি কোম্পানিটির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান আরও জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এক হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং অবশিষ্ট এক হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা বিডার্স ফাইনান্সিং-এর মাধ্যমে ব্যয় সংকুলান হয়েছে।
উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখ সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘স্পেসএক্স স্যাটেলাইটটি গ্রহণ করে তিন-চার দিনের মধ্যে আমাদের উৎক্ষেপণের সম্ভাব্য তারিখ জানাবে।’
যে রকেটের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করা হবে, সেটি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে মেসবাহুজ্জামান বলেন, রকেটটি তৈরির কাজ দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং কয়েক দিনের মধ্যে এটির প্রস্তুতকরণের কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি রকেট ব্যবহার করছি। তাই উৎক্ষেপণের জন্য আমাদের একটু সময় লাগছে। পুরোনো রকেট ব্যবহার করা হলে অনেক কম সময় লাগত।’
ড. শাহজাহান মাহমুদ জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ভ‚মি থেকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে প্রাথমিক এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র দ্বিতীয় গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণ কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর এটি পরিচালনা, সফল ব্যবহার ও বাণিজ্যিক কার্যত্রম সম্পাদনের জন্য ইতিমধ্যে সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। নতুন এই কোম্পানিতে কারিগরী লোকবল নিয়োগ এবং তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে। বাকি ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির জন্য রাখা হবে। স্যাটেলাইটটি ১৫ বছর মেয়াদের মিশনে পাঠানো হচ্ছে।
এই কৃত্রিম উপগ্রহটি টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা দেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ টেরেস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগব্যবস্থা বহাল থাকা, পরিবেশ যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে ই-সেবা নিশ্চিত করবে।
স্যাটেলাইটের কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে শুরু হলে আশপাশের কয়েকটি দেশে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার সেবা দেওয়ার জন্য জিয়োসিক্রোনাস স্যাটেলাইট সিস্টেমের (৪০ ট্রান্সপন্ডার, ২৬ কেইউ ব্র্যান্ড, ১৪ সি ব্যান্ড) গ্রাউন্ড সিস্টেমসহ সব ধরনের সেবা পাওয়া যাবে।