আয়না২৪ প্রতিবেদন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন সুরক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, ১৯৯৭ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই সুন্দরবনের একটি এলাকা বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। দেশের উন্নয়নে তাঁর সরকার যে পদক্ষেপই নিক না কেন, একটা বিষয় সব সময়ই খেয়াল রাখা হয়, সুন্দরবন যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।’
গতকাল রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষমেলা ২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন যে আমাদের একটা ঐতিহ্য, শুধু তা-ই নয়, এই সুন্দরবনের কারণেই কিন্তু বাংলাদেশ টিকে আছে। এই সুন্দরবন আরও যাতে বৃদ্ধি পায়, সে জন্য আমরা কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি এবং সমগ্র উপকূলীয় অঞ্চলে এর বিস্তৃতি ঘটানোর জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি এবং বন অপরাধ দমনের জন্য স্মার্ট পেট্রোলিংয়ের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’
পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইশতিয়াক আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইসুল আলম মণ্ডল এবং প্রধান বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুল আলম চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা, সংসদ সদস্য, সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, কূটনৈতিক মিশনের সদস্য, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আজ ৫ জুন বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্রাণের স্পন্দনে প্রকৃতির বন্ধনে’।
এদিকে ‘বৃক্ষরোপণ করে যে সম্পদশালী হয় সে’ স্লোগান নিয়ে আজ থেকে তিন মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিও শুরু হয়েছে।বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে একটি কাঁঠালগাছের চারা রোপণ করে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান এবং পরিবেশ মেলা ও বৃক্ষমেলা ২০১৭-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন-২০১৭, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার-২০১৬ ও সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক দেন।
বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং ঢাকার কলাবাগানের মোকারম হোসেন ব্যক্তিগতভাবে বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পরিবেশ পুরস্কার ২০১৭ এবং স্কয়ার ফার্মসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠানগতভাবে এ পুরস্কার লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দুজনের হাতে সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেকও প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী পরিবেশের ভারসাম্যকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে এই ভারসাম্য রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রকৃতি যখন ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, তখন মানুষের জন্য তা বিপদ ডেকে নিয়ে আসে।শেখ হাসিনা বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা না থাকলেও আমরা এর বিরূপ প্রভাবের নির্মম শিকার। বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আমাদের। আমাদের সরকার ইতিমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিপর্যয় মোকাবিলায় ২০০৯ সালে প্রণীত বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি) যুগোপযোগী করছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ২০১০ সালে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি। এ খাতে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গঠিত গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড এবং এলডিসি ফান্ড থেকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ প্রাপ্তির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।