আয়না ২৪ ডেস্ক
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে সাবেক সচিব ও পুলিশের সাবেক আজিপি কে এম নূরুল হুদাকে। নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরীকে। খোঁজ কমিটির বাছাই করা দশ নামের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি পাঁচটি নাম বাছাই করেন। আর পাঁচটি নাম বাদ দেন।
নিয়োগ পাওয়া দশজনের মধ্যে নিয়োগপ্রাপ্তদের বাইরে যে পাঁচটি নাম ছিল তারা হলেন: সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জরিনা রহমান, অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ, পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য মো. আব্দুল মান্নান এবং জানিপপের প্রধান ও অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম সোমবার রাত সাড়ে ন’টার পর সচিবালয়ে এই নাম ঘোষণা করেন। রাতে এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, রাজনৈতিক দলের তালিকা থেকেই নাম নেওয়া হয়েছে।
এর আগে সন্ধ্যায় খোঁজ কমিটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঁচজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করার জন্য দশজনের নাম সুপারিশ করে তালিকা জমা দেয়। এই দশটি নাম থেকেই রাষ্ট্রপতি রাতেই পাঁচজনকে কমিশনার নিয়োগ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবিত নাম থেকেই খোঁজ কমিটি নাম বাছাই করে। দশটি নামের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে সাবেক সচিব আলী ইমাম মজুমদার ও সাবেক মহাপুলিশ পরিদর্শক নূরুল হুদার নাম প্রস্তাব করেছিল কমিটি।
রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেন। এরমধ্যে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিযুক্ত করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য তিন কমিশনারসহ মোট চারজন ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দায়িত্ব নিবেন। ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের চারজনের আর ১৪ ফেব্রুয়ারি একজনের মেয়াদ শেষ হবে। একজন দায়িত্ব নিবেন ১৫ ফেব্রুয়ারি।
এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ খোঁজ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে রাষ্ট্রপতির কাছে দশজনের নাম জমা দেন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি খোঁজ কমিটি গঠনের পর থেকে তারা যেভাবে কাজ করেছেন এবং বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সেই সারসংক্ষেপও জমা দিয়েছেন। বিশিষ্টজনরা যে পরামর্শ দিয়েছেন সেসব বিবেচনা করেই নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক চলে দেড় ঘণ্টাব্যাপী। এই সময়ে রাষ্ট্রপতি খোঁজ কমিটির সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। তাদের মতামতও নিয়েছেন।
এর আগে খোঁজ কমিটি বিকাল চারটায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বৈঠকে বসেন। তারা সেখানে নাম চূড়ান্ত করেন। যেসব নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে ওই সব নামের ব্যাপারে কমিটির সকল সদস্য একমত হয়েছেন বলেই জানা গেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকার একাধিক জনের বিরুদ্ধে খোঁজ কমিটির কাছে বিভিন্ন তথ্য আসে। সেই সব তথ্য বিবেচনা করা হয়। সূত্র জানায়, তালিকায় থাকা কয়েকজনের ব্যাপারে কিছু দলীয় সুবিধা নেওয়ারও তথ্য আসে। নিরপেক্ষ বলে তাদেরকে এই জন্য বিবেচনা করা সম্ভব হয়নি কমিটির। সেই কারণে সার্চ কমিটি যারা আপাতদৃষ্টি সৎ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, যোগ্য ও দক্ষ তাদেরকেই নিয়োগ করার সুপারিশ করেন।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে সোমবার বিকাল ৪টার দিকে খোঁজ কমিটির ছয় সদস্য চতুর্থ ও শেষ বৈঠকে বসেন সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে। বৈঠক শেষ হয় ৬টার কিছু আগে। ওই বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন কমিটির আহ্বায়ক ও আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বাকি পাঁচ সদস্য। তারা হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার।
বৈঠকে খোঁজ কমিটির সদস্যরা তাদের কাছে থাকা নামের তালিকাগুলো পর্যালোচনা করেন এবং কমিটির প্রধান এক এক করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে নাম চূড়ান্ত করেন। মাত্র চারটি বৈঠকেই খোঁজ কমিটি দশটি নাম চূড়ান্ত করলো।
সোমবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠকে সার্চ কমিটি এসব নাম চূড়ান্ত করে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া।
বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন অতিরিক্ত সচিব আবদুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, অনুসন্ধান কমিটি নির্ধারিত সময়-সীমার মধ্যেই কাজের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছেন। এরই মধ্যে ১০ জনের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। আজকে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ সময় সাংবাদিকরা ১০ জনের নাম জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব বলেন, নাম বলা যাবে না। নাম প্রচার করা হবে কী হবে না তা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে নাম প্রকাশের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নাম নির্বাচনের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, এটা স্পেসিফিক করে বলা যাচ্ছে না। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রস্তাব করেছে, তার মধ্য থেকেই সুপারিশ করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।
৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করে অতিরিক্ত সচিব আরও জানান, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের মতামতে নির্বাচন কমিশনারদের যে যোগ্যতা ও মানদ-ের কথা বলেছেন, মূলত তাদের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করেই এ মানদ- নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনের সারক্ষেপ তাৎক্ষণিকভাবে বলতে চাননি অতিরিক্ত সচিব। রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাদের নাম প্রস্তাব করেছে, সেই সব নামের মধ্য থেকেই ১০ জনকে মনোনীত করে রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছে সার্চ কমিটি।
অপরদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বিষয়ে বিশিষ্টজনরা যে প্রস্তাব দিয়েছেন তাও বিবেচনায় নিয়েছে কমিটি। পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনে এবার প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন একজন নারী। সার্চ কমিটি গঠন করে জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়ে সুপারিশ করতে বলা হয়। ফলে সার্চ কমিটি আটজন পুরুষ ও দুজন নারীর নাম সুপারিশ করতে যাচ্ছে। খোঁজ কমিটি প্রথম দিনে তাদের কর্মপদ্ধতি ঠিক করে। ৩১টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে নামের তালিকা চেয়ে পাঠায়। দ্বিতীয় বৈঠকে তারা ১২ বিশিষ্টজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তৃতীয় বৈঠকে তারা আরও চারজনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ওই দিন তারা নামের তালিকা থেকে ২০ জনের নামের সংক্ষিপ্ত তালিকা করেন। গতকাল খোঁজ কমিটি শেষ বৈঠক করে ও দশ নাম চূড়ান্ত করে রিপোর্ট জমা দেয়।
এদিকে খোঁজ কমিটির বৈঠক শেষে জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক দলের নামের তালিকা থেকেই নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এই সব নাম প্রকাশ করা হবে সেই ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিবেন। পরে রাষ্ট্রপতি নাম প্রকাশ করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেন। রাতে নয়টা সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নাম প্রকাশ করে। বিএনপির তরফ থেকে আগেই দাবি করা হচ্ছিল নাম করার ।
নতুন করে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে এই কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ নিয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত মোট ৩১টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। আর এই সংলাপ শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর গঠন করা হয় খোঁজ কমিটি। ২০১২ সালেও বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ার আগে সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিলেন।