আয়না২৪ প্রতিবেদন
আজ বুধবার দেশের ৬১টি জেলায় জেলা পরিষদের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার লক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। অনেক জেলায় ভোটকেন্দ্রে স্থাপন করা হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। নির্বাচনকে প্রভাব মুক্ত রাখতে সাংসদ ও মন্ত্রীদের নির্বাচনের আগে স্ব স্ব এলাকার ত্যাগের নির্দেশ দেয় কমিশন। জাতীয় সংসদের স্পীকারও সাংসদদের এলাকা ত্যাগের ব্যাপারে আলাদা চিঠি দিয়েছেন্ কিন্তু কমিশন ও জাতীয় সংসদের স্পিকারের নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে বেশ কয়েকজন সাংসদ সক্রিয় প্রভাব বিস্তার করছেন জেলা পরিষদ নির্বাচনে। দেশের সাতটি জেলায় অন্তত ১১ জন সরকারদলীয় সাংসদ নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এসব এলাকার প্রার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সাংসদেরা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন, কেউ কেউ ভোটের বিনিময়ে টিআর-কাবিখা বরাদ্দের কথাও বলছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
দিনাজপুরে তিন সাংসদ এলাকাংঃ দিনাজপুরেই তিনজন সাংসদ অবস্থান করছেন। দিনাজপুর সদরের সাংসদ ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বেশ কিছুদিন ধরেই এলাকায় অবস্থান করছেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে। এর বাইরে দিনাজপুর-১ আসনের সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপাল এবং দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ শিবলী সাদিক দিনাজপুরে অবস্থান করছেন।
জানতে চাইলে ইকবালুর রহিম জানান, নির্বাচন কমিশনের বা স্পিকারের নির্দেশনা তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, ‘আমার মা অসুস্থ বলেই বাড়িতে এসেছি। সারা দেশেই তো জেলা পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে। তাহলে আমরা যাব কোথায়?’
কলাপড়ায় সাংসদ স্তীর প্রচার চালাচ্ছেনঃ পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সাংসদ ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার কয়েক দিন ধরেই নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করছেন। সাংসদের স্ত্রী প্রীতি হায়দার জেলা পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদের প্রার্থী। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, সাংসদ স্ত্রী ছাড়াও পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইছেন। এই সাংসদের বিরুদ্ধে ভোটারদের চাপ প্রয়োগ, ভয়ভীতি দেখানো এবং নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি এলাকায় আছি, এটা ঠিক। তবে নির্বাচনের বিষয়ে আমি কোনো হস্তক্ষেপ করিনি, কারও কাছে ভোটও চাইনি। কারণ, এখানে যাঁরা নির্বাচন করছেন, তাঁরা সবাই আমার দলের লোক। তাই কারও পক্ষে ভোট চাওয়া বা ভয়ভীতি দেখানোর প্রশ্নই আসে না। আমি আজ (গতকাল) রাতেই এলাকা ছাড়ব।’
সুনামগঞ্চেও সাংসদ আছেন নিজ বাড়িতেঃ সুনামগঞ্জ ১ (ধরমপাশা-জামালগঞ্জ ও তাহিরপুর) আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়া একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, সাংসদ দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় অবস্থান করছেন। বাড়িতে ভোটারদের ডেকে পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। টিআর, কাবিখাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমার সন্তানদের স্কুল বন্ধ। তাই আমি বাড়িতে এসেছি। নিজ বাড়িতে থাকা যাবে না—নির্বাচন কমিশন থেকে এমনটি বলা হয়নি। কেন্দ্রে না যাওয়া, ভোটারদের প্রভাবিত না করার কথা বলেছে। আমি এসব কিছু করছি না।’
পিরোজপুরে আউয়ালেরর বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীর অভিযোগঃ পিরোজপুর-১ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে নিজ দল থেকেই। গতকাল পিরোজপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শাহ আলম অভিযোগ করেন, সাংসদ এলাকায় অবস্থান করে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ডেকে মহারাজকে ভোট দিতে চাপ দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে সাংসদ এ কে এম এ আউয়াল মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কাজে পিরোজপুরে অবস্থান করছি। আমার ব্যবসা দেখাশোনা ও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন করা শেষে ঢাকা চলে যাব। নির্বাচনে আমি কারও পক্ষে কোনো প্রচারণা চালাচ্ছি না। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
আরো যাঁরা নির্দেশ অমান্য করেছেনঃ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে আরও যেসব সাংসদ এলাকায় অবস্থান করছেন তাঁরা হলেন সাতক্ষীরা-২ আসনের মীর মোস্তাক আহমেদ, খুলনা-৬ (কয়রা-পাইকগাছা) আসনের শেখ মো. নূরুল হক, খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনের মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, কুড়িগ্রাম-১ (নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী) আসনের এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান ও কুড়িগ্রাম-৪ (রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারী) আসনের রুহুল আমিন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের মন্ত্রী ও সাংসদদের জেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, কোনো অবস্থাতেই তাঁরা এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন না। নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না।