আয়না২৪ প্রতিবেদন
পুলিশ পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান দম্পতি হত্যা মামলায় তাদের মেয়ে ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামির আপিল শুনানি করে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ রায় দেন। রায়ে ঐশীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশিপাশি ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হত জহির।তিনি জানান, ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোট। সাজার কমানোর পাঁচটি কারণ রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, বাবা-মার অবহেলা, ঘটনার দুই দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ ও মাদকাসক্ততা।
তিনি আরও জানান, এছাড়া রায়ে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়।
ঐশীর আইনজীবী সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী জানান, ঐশির পরিবারের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত ৭ মে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) করে রাখা হয়।
ওই সময় আদালতে ঐশীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহুরুল হক জহির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম। মোট ১৩ কার্যদিবস শুনানি হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর মালিবাগের চামেলীবাগের বাসা থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত মাহফুজুর রহমানের ছোট ভাই মো. মশিউর রহমান রুবেল পরের দিন পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এর পর ওই দিন বিকেলে পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে নিজের বাবা-মা হত্যার কথা স্বীকার করে ঐশী রহমান। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ঐশীকে প্রধান আসামি করে তিনজনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ঐশীকে দু’বার মৃত্যুদণ্ড এবং ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দু’বছর কারাদ ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া অন্য আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দেওয়া হয়।
মাকে কফি খাইয়ে অজ্ঞান করে হত্যার দায়ে ঐশীকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। একই সঙ্গে বাবাকে হত্যার অভিযোগে পৃথকভাবে একই দণ্ড দেওয়া হয়। বিচারক তার রায়ের পর্যবেক্ষণে ঐশীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দ্বৈত (ডাবল) মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশদ ব্যাখ্যা দেন।বিধি অনুসারে ঐশীর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
অন্যদিকে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে একই বছরের ৬ ডিসেম্বর ঐশী হাইকোর্টে পৃথক আপিল করে। চলতি বছরের ১২ মার্চ হাইকোর্টে আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি শুরু হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় ঐশী মানসিকভাবে সুস্থ ছিল না বলে দাবি করে ৩ এপ্রিল দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন তার আইনজীবীরা। এর পর ১০ এপ্রিল ঐশীকে খাস কামরায় নিয়ে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ তার মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন।
এ মামলায় ঐশীদের অপ্রাপ্তবয়স্ক গৃহকর্মী সুমিকেও আসামি করা হয়েছে। তার বিচার বর্তমানে কিশোর আদালতে চলছে।