আয়না ২৪ প্রতিবেদক
গতবছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা বাস্তবায়িত হয়। এক বছরের মাথায় নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর তোড়জোড়ের মূল কারণ এলএনজি আমদানি। গ্যাসের দাম আর ও বাড়তে চলেছে দেশে। যেদিন থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ সুরু হবে, শিল্পকারখানার মালিকদের সেদিন থেকে নতুন দরে গ্যাস কিনতে হবে। আর গ্যাস এর নতুন দর এখনকার চেয়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি হতে পারে।
পেট্রোবাংলা কর্মকর্তারা মনে করছেন, দেশে উৎপাদিত গ্যাস স্থানীয় বাজারে এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে, এলএনজি আমদানির পর তা প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে হবে। আর এই ধারণার ভিত্তিতে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগে নেওয়ার পর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনও (বিইআরসি) কাজ শুরু করেছে। এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে ১৫ মের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী গত বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম চেম্বারের এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়েছেন।
সরকার কাতার থেকে জাহাজে করে এলএনজি এনে কক্সবাজারের মহেশখালীর ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে চায়, যা যুক্ত হবে জাতীয় সরবরাহ ব্যবস্থায়। এলএনজি আমদানির বিষয়টি এগিয়ে আসায় গ্যাসের দাম নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। সম্প্রতি পেট্রোবাংলা থেকে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের চেয়ারম্যানকে জানানো হয়, এলএনজি আমদানির পর প্রতি ঘনমিটার গ্যাস (প্রাক্কলিত) গড়ে ১৩ টাকার কমে বিক্রি করা সম্ভব হবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে যেসব ডুয়েল ফুয়েল (দুই ধরনের জ্বালানিতে চালানো যায়) বিদ্যুতকেন্দ্র আছে; সেগুলো গ্যাসের অভাবে তেল দিয়ে চালানো হচ্ছে। এলএনজি এলে সেখানে তেলের বদলে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ানো যাবে।
“তখন এটা তেলের থেকে কম খরচ পড়বে। তেলে যে দামটা পড়ত, গ্যাসে চালালে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে না।”
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, বর্তমানে শিল্পকারখানায় ৭ টাকা ৭৬ পয়সা দরে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করা হয়। এটা যেমন বাড়বে, তেমনি বাণিজ্যিক এবং আরও কিছু ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়তে পারে। এর আগে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। এখন দেশে দৈনিক গড়ে ২৬৭ কোটি থেকে ২৬৮ দশমিক ৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়। এ গ্যাসের ৩০ শতাংশ ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে। শিল্পকারখানায় গ্যাসের ব্যবহার মোট সরবরাহের প্রায় ১৬ শতাংশ। সার কারখানায় মোট গ্যাসের ৫ শতাংশ ব্যবহার করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গ্যাস না থাকার যে মূল্য, সেটা অনেক বড়। তারা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারে এবং এটা যদি সমন্বয় করতে পারে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ যদি তারা পায়, তাহলে ব্যবসার উন্নতি হবে বলে আমি মনে করি। তখন এই খরচ মিনিমাম হয়ে যাবে।”
পেট্রোবাংলার হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভর্তুকিতে গ্যাস বিক্রি করে ৩৬২১ কোটি টাকা এবং সার উৎপাদনে গ্যাস বিক্রি করে ৫১১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে করপোরেশনের।
গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আগামী এপ্রিল থেকে যদি প্রতি ঘনমিটার ১৩ টাকা দরেও বিক্রি করা হয়, তারপরও তাদের লোকসান বাড়বে বলে কর্মকর্তাদের ভাষ্য।
প্রাকৃতিক গ্যাস সাধারণ চাপ ও তাপমাত্রায় গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। শীতলীকরণ (রেফ্রিজারেশন) প্রযুক্তির মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে মাইনাস (-) ১৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনলে তা তরলে পরিণত হয়। এই তরল প্রাকৃতিক গ্যাসই হচ্ছে এলএনজি। দেশে গ্যাসের মজুত কমে আসায় বিকল্প হিসেবে কাতার থেকে গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এলএনজি মহেশখালী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আনোয়ারা হয়ে সীতাকুণ্ডের গ্রিডে যুক্ত হবে।