আয়না২৪ প্রতিবেদন
রেজওয়ান জামায়াতুল মুসলেমিনের যুক্তরাজ্য শাখার আমির আবু ইসা আল রাফাইয়ের অনুসারী। রাফাই জর্দানের বংশোদ্ভত ব্রিটিশ নাগরিক। রেজওয়ান হারুন দেশে বড় ধরনের কোন নাশকতার জন্য দেশে প্রবেশ করছেন বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনসহ ১৮টি সংস্থা বিমান বন্দরে দায়িত্ব পালন করে। এমন করা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কেমন করে মোস্ট ওয়ান্টেট জঙ্গি প্রবেশ করেছেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশের অনুরোধ করা হয়। এছাড়া একই চিঠি সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, মহাপুলিশ পরিদর্শক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়।
সূত্র জানায়, রেজোয়ান হারুন বাংলাদেশি দু’টি পাসপোর্ট একসঙ্গে ব্যবহার করতেন। তার একটি পাসপোর্ট নাম্বার বিএইচ ০৬৩৪১৩৭। ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইস্যু হওয়া এই পাসপোর্টের মেয়াদ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এছাড়া তার আরেকটি পাসপোর্ট নম্বর এই ৬০১৬৯৩৩। ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর ইস্যু হওয়া এই পাসপোর্টটি চলতি বছরের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে। রেজোয়ান হারুনের বিরুদ্ধে ঢাকার সামুরাই কনভেনশন সেন্টারে প্রচলিত ইসলামিরীতির বিরুদ্ধে গিয়ে একদিন আগের ঈদের জামায়াত আদায়, বাসায় জুম্মার নামাজ আদায় করার রীতি প্রচলনের চেষ্টার অভিযোগও রয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে ধানমন্ডির ৬/এ সড়কে প্রতিষ্ঠিত হওয়া লেকহেড গ্রামার স্কুলের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই স্কুলের বনানী ও গুলশানে আরও দু’টি শাখা রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন এই স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন জেনিফার আহমেদ, যিনি বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীর সংগঠিত করার অন্যতম প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম মাওলার স্ত্রী। জেনিফার নিজেও হিযবুতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হওয়ার পর এই স্কুল প্রথম আলোচনায় আসে। ওই বছরই এই স্কুল পরিচালনার পূর্ণ দায়িত্ব নেন হারুন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কর্ণধার হারুন অর রশিদ ও তার ছেলে রেজোয়ান হারুন। শুরু থেকেই এই স্কুলে এমন শিক্ষকরা কর্মরত ছিলেন, যাদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। নেপথ্যে থেকে তাদের সাংগঠনিক কাজকর্ম সম্পাদন করতেন রেজোয়ান হারুন। বেশিরভাগ সময় লন্ডনে থাকলেও চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে প্রকাশ্য চলাফেরা বন্ধ করে আত্মগোপন চলে যান তিনি। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে শুক্রবার দেশে ঢুকলেও পরে আত্মগোপনে চলে যান।
দায়িত্বশীল একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, রেজোয়ান হারুনের সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক নেতা কারাবন্দি জসিম উদ্দিন রাহমানী, আনসারুল্লাহার আরেক শীর্ষ নেতা রেজওয়ানুল আজাদ রানা, পাকিস্তানে গ্রেফতার হওয়া বাংলাদেশি জঙ্গি ইফতেখার আহমেদ সনি, জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে অভিযুক্ত ও নিখোঁজ হওয়া ফারজাদ হক তুরাজ, জুবায়েদুর রহমান, তাসনুভা হায়দার, ইয়াসিন তালুকদার, আরিফুর রহমানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তারা সবাই বিভিন্ন সময়ে রেজোয়ান হারুনের লেকহেড গ্রামার স্কুলে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকতা করেছেন। এমনকি হলি আর্টিজানে হামলাকারীদের প্রশিক্ষণদাতা সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলামও লেকহেড গ্রামার স্কুলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতেন। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর রূপনগরে জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে জাহিদ মারা যায়।
স্কুলের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল, লেকহেড গ্রামার স্কুলের উদ্দেশ্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মনে তার মুসলিম পরিচয় গেঁথে দেওয়া এবং সারা জীবন যেন সে এই বিশ্বাস ধরে রাখে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল, সন্তানকে ‘আল্লাহর খলিফা’ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যেন সে সত্যিকারের ইসলামি বিশ্ব গড়ে তোলায় সহযোগিতা করতে পারে।
২০১০ সালের মাঝামাঝির কথা। ওই বছরের শুরুতে ইয়েমেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হন কিছু বাংলাদেশি যুবক। পরে তারা দেশে ফিরে আসেন। তাদের মধ্যে দুজন তেহজীব করীম ও মাঈনুদ্দীন শরিফ ছিলেন ধানমন্ডির লেকহেড গ্রামার স্কুলের শিক্ষক।
মাঈনুদ্দীনের আরেক ভাইও ইয়েমেনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তারা সবাই আল-কায়েদার আরব উপদ্বীপের নেতা আনওয়ার আওলাকির অনুসারী ছিলেন বলে তখন ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেছিলেন। এর মধ্যে তেহজীব করিমের বড় ভাই রাজীব করীম ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমান উড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এবং পরবর্তীতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যুক্তরাজ্যের কারাগারে দণ্ড ভোগ করছেন।
জানা যায়, ২০০২ সাল থেকে বাংলাদেশে সে জামায়াতুল মুসলেমিন সংগঠিত করার কাজ শুরু হয়। আল-কায়েদার অনুসারী জামায়াতুল মুসলেমিন বাংলাদেশে উচ্চবিত্ত তরুণদের দলে ভেড়ানো শুরু করে। জামায়াতুল মুসলেমিন প্রথমে দেশের ১৩ জেলায় তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৫ সালে ব্ল্যাকলিস্টেড হওয়ার পর তারা আরসিইউডি (রিসার্স সেন্টার ফর ইউনিটি ডেভেলপমেন্ট) ছদ্মবেশে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। সর্বশেষ জামায়াতুল মুসলেমিনের আমির ছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রেজাউর রাজ্জাক। রেজোয়ান হারুন ও রেজাউর রাজ্জাক মিলে আরসিইউডি পরিচালনার নামে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত বছরের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার পর ড. রেজাউর রাজ্জাক মালয়েশিয়া পালিয়ে যান।