আয়না ২৪ প্রতিনিধি
জয়দেবপুর জংশনের মাস্টার শহীদুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে উত্তরবঙ্গ এবং ময়মনসিংহের পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ভারতগামী মৈত্রী এক্সপ্রেসের ধাক্কায় প্রাইভেটকারটি ছিটকে পড়ে এবং দুমড়ে মুচড়ে যায়।
ওই গাড়ির চালক, দুই নারী এবং দুটি শিশু ঘটনাস্থলেই মারা যায় বলে এসআই রাসেল জানান।
রেল লাইন বন্ধ থাকায় ঢাকাগামী সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ও নীলসাগর এক্সপ্রেস বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে
রেলের হাজারো অব্যবস্থা ও অনিয়মের একটি হলো অরক্ষিত রেলক্রসিং। ভাবা যায়, প্রতি বছর রেলক্রসিং নামের মৃত্যুফাঁদে পড়ে সারা দেশে মারা যাচ্ছে দুই সহগ্রাধিক মানুষ। এদের মধ্যে রাজধানীতেই কাটা পড়ছে ৪০০ জন। শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকের এক প্রতিবেদনে যশোরের লেভেলক্রসিংগুলোর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, যশোরের অধিকাংশ লেভেলক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে যানবাহন ও পথচারীরা। আর এসব অরক্ষিত গেট থাকার কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। যশোরের মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হচ্ছে বৈধ ও অবৈধ রেলগেট। অবৈধ তো বটেই বৈধগুলোর অনেকটিতেই নেই গেটম্যান। ফলে অরক্ষিত ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে চলেছে। অথচ এগুলো সুরক্ষিত করার কোনো তাগিদ নেই।
উল্লিখিত সংবাদ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যশোরের রেললাইনে ১৫৬টি লেভেলক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে বৈধ ৮৯টি, বাকি ৬৭টিই অবৈধ। আবার বৈধ ৮৯টি গেটের মধ্যে ৫২টিতেই গেটম্যান নেই। দেশের রেলক্রসিংগুলো যে ভয়াবহ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে তা বুঝার জন্য এই পরিসংখ্যানটিই কি যথেষ্ট নয়।
জানা গেছে, যশোর বারিনগর বাজারে রয়েছে একটি অরক্ষিত রেলগেট। এ গেটে কোনো গেটম্যান না থাকায় গত বছর ট্রেনের ধাক্কায় একটি মাইক্রোবাস দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছিল। তাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন মাইক্রোবাসে থাকা বর-বধূসহ বেশ কয়েকজন। সর্বশেষ দুর্ঘটনা ঘটে বারিনগরের পাশে মানিকদিহি লেভেলক্রসিংয়ে। গত ২৩ জুন সকালে ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হন প্রাইভেটকারের ৪ যাত্রী।
সারাদেশে মোট ২ হাজার ৮৭৮ কিলোমিটার রেলপথে অবৈধ রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টি। এই অবৈধ ক্রসিংগুলো পুরোপুরিই অরক্ষিত। এগুলো দিয়ে পারাপার, রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচলসহ নানা কারণে প্রতি বছর গড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এটাই যখন বাস্তবতা, তখন রেল কর্তৃপক্ষের করণীয় কি? এসব দুর্ঘটনা, প্রাণহানির দায় কার? দেশে রেলপথে রেলক্রসিং স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ, অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করার দায় আইনত কোন কর্তৃপক্ষের?
বর্তমান বাস্তবতায় তাদের ভূমিকা কী? রেল সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বহু প্রকল্প গ্রহণের কথা আমরা শুনে আসছি। কিন্তু রেলের অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা রেলক্রসিং সুরক্ষিত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে গেটম্যান নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা কেন? আর অবৈধ রেলক্রসিংগুলোর ব্যাপারে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দ্বারা এগুলো স্থাপিত হয়। কিন্তু এগুলোতে অরক্ষিত মুত্যুফাঁদ হয়ে তো থাকতে পারে না। অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধের ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতার কথাও শোনা যায়। অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের ব্যাপারে আইন কী বলছে তা আমরা জানি না। তবে না জেনেও আমরা বলতে পারি, এসব ক্রসিংকে ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে।
রেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে রেলক্রসিংগুলোকে অবশ্যই সুরক্ষিত করতে হবে। বৈধ রেলক্রসিংগুলোতে অবশ্যই গেটম্যান থাকা নিশ্চিত করতে, যেখানে নেই সেখানে দ্রুত নিয়োগদানের ব্যবস্থা করতে হবে। অবৈধ রেলক্রসিংগুলো আইনানুগভাবে বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে, নেহাত বন্ধ করা না গেলে যথাযথ অবকাঠামো ও গেটম্যান দিয়ে এগুলো সুরক্ষিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে রেলগেট মরণফাঁদ হয়েই থাকবে, যা আমাদের কারো কাম্য হতে পারে না। রেলে নিরাপত্তার দিকটি অবশ্যই যথাযথ গুরুত্বসহ দেখা দরকার।