আয়না২৪ ডেস্ক
সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থীরা বিচারপতি হতে পারবেন না বলে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের নীতিমালা নিয়ে করা রিটের রুল নিষ্পত্তি করে দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হয়েছে। এ রায়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাতটি যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এতে আরও বলা হয়েছে মূল্যায়নের সর্বময় ক্ষমতা থাকবে প্রধান বিচারপতির হাতে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে গত ১৩ এপ্রিল বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট নিষ্পত্তি করে এই রায় দেন।
যে কয়টি বিষয় নিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, তার একটিতে বলা আছে, কোনও ব্যক্তি, বাংলাদেশের কোনও নাগরিক, যার রাষ্ট্রীয় মৌলিক নীতি, যেমন, সংবিধানের ৮ম অনুচ্ছেদে উল্লিখিত জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ১৯৭১ সালে যে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই জাতির স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেই চেতনার প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্য রয়েছে, তিনি বিচারপতি হতে পারবেন। কোনও ব্যক্তির অতীত জীবন এসব নীতি ও চেতনার সঙ্গে যথাযথভাবে মানানসই না হলে, তাকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা উচিত হবে না।
আপিল বিভাগে আইনজীবীর নাম নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করতে প্রধান বিচারপতির সুপারিশকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিশেষ ব্যতিক্রম হিসেবে হাইকোর্ট ডিভিশনে আইনজীবীর নাম নথিভুক্ত করতে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দীর্ঘদিনের অনুশীলন (প্র্যাক্টিস) করাকে বিবেচনায় নিয়ে হাই কোর্ট ডিভিশনে সুপারিশকে গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে।
বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা আনতে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে ২০১০ সালের ৩০ মে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাগীব রউফ চৌধুরী একটি রিট করেন। ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট এই বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। সেদিনই আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখে। পরে ১৩ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে এ মামলায় শুনানিকালে মামলায় অ্যামিকাস কিউরি দেশের সাতজন বিশিষ্ট আইনজীবীর অভিমত গ্রহণ করেন আদালত। তারা হলেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ এবং এএফ হাসান আরিফ। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম ও মির্জা আল মাহমুদ।
২০১০ সালের ৬ জুন রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগে বাছাই প্রক্রিয়ায় ‘স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা’ আনতে কেন সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা তৈরি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন বিচারপতি মো. ইমান আলী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ষোড়শ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ন্যস্ত করা হয়। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও বিলের পক্ষে ভোট দেয়।
এর আগে ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত হয়েছিল। এরপর পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ন্যস্ত হয়। প্রধান বিচারপতি ও অন্য দু’জন সিনিয়র বিচারপতিকে নিয়ে জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়।
পরবর্তীকালে ২০১২ সালে সড়ক ভবনকে কেন্দ্র করে আদালতের একটি রায় নিয়ে সংসদে বিরূপ সমালোচনা হলে একজন বিচারক সংসদ ও স্পিকারকে নিয়ে মন্তব্য করলে সেই সময় সাংসদদের অনেকেই বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন। এ নিয়ে স্পিকার পরে একটি রুলিংও দেন।