আয়না ২৪ প্রতিনিধি
মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করে সবাইকে বেশি বেশি বই পড়ার আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তরুণ–তরুণীদের ‘বিপথগামী’ হওয়া ঠেকাতে সাহিত্য–সংস্কৃতি চর্চার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি বিপথে চলে যায়, তাদের সেই বিপথ থেকে উদ্ধার করা যায় এই সাহিত্যচর্চার মধ্য দিয়ে। লেখাপড়া, সংস্কৃতিচর্চা যত বেশি হবে, তত বেশি তারা ভালো পথে চলে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ সবাইকে বেশি বেশি বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বই পড়ার ভেতর অনেক আনন্দ পাওয়া যায় এবং বই পড়লে অনেক কিছু ভুলে থাকা যায়। আবার অনেক জ্ঞান অর্জনও করা যায়।’
‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৭’–র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা আকাদেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন বিদেশি সাহিত্যিক ও গবেষক বক্তব্য পেশ করেন। এঁদের মধ্যে চীনা ভাষায় প্রকাশিত ৩৩ খণ্ডের রবীন্দ্র রচনাবলীর সম্পাদক ডং ইউ চেন, অস্ট্রিয়ার কবি মেনফ্রেড কোবো, পুয়ের্তোরিকোর সাহিত্যিক লুস মারিয়া লোপেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক–প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক চিন্ময় গুহ ছিলেন। শেখ হাসিনা জানান, তাঁর বাড়িতে আগে থেকেই বইপড়ার চর্চা ছিল এবং এখনও তা আছে।
শিশুকাল থেকে বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চর্চাটা ছোটবেলা থেকে হলেই অভ্যাসে পরিণত হয়। আমি সেজন্য আমাদের ছেলেমেয়েদের বই পড়তে আহ্বান জানাব। বই পড়লে বিশ্বকে জানা যাবে। ছাত্রছাত্রীদের বলব, সকলে বই পড়বেন। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, হাতে বই নিয়ে পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পড়ার মধ্যে একটা আনন্দ আছে। কাজেই বই আরও ছাপা হোক, আরও সুন্দর হোক— সেটাই আমি চাই।’ একুশে বইমেলা প্রসঙ্গে হাসিনা বলেন, বইপ্রেমী সবাই এই বইমেলা শুরুর অপেক্ষায় থাকেন। কাজেই এই বইমেলার মধ্য দিয়ে একদিকে যাঁরা সাহিত্যের চর্চা করেন, তাঁদের বই প্রকাশ হয়, আবার প্রকাশকেরা বই প্রকাশ করেন। ছোট শিশু থেকে সকলেই বই কেনেন। এটা বিরাট মিলনমেলায় পরিণত হয়।’ কিন্তু সরকারের প্রধান হিসেবে কাজের চাপ ও নিরাপত্তার কারণে বইমেলায় না ঘুরতে পারার দুঃখের কথাও বলেন তিনি। ‘আমার একটাই দুঃখ— রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার ফলে এখন আর আগের মতো এই বইমেলায় আসতে পারি না। হাত–পা বাঁধা। কী করব! এটাই হচ্ছে সব থেকে দুঃখের!’
এুকশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি রক্ত দিয়ে ভাষার মর্যাদা রক্ষা করে গেছে। কাজেই আজকের এই দিবসটা শুধু আমাদের দিবস না। আজকে সমগ্র পৃথিবীতে যারাই মাতৃভাষাকে ভালবাসে, তাদেরই জন্য এই দিবসটি।’ পাকিস্তানি শাসকদের মাতৃভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা এবং বাঙালি ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন হাসিনা। ‘আমাদের যা কিছু অর্জন করতে হয়েছে রক্তের মধ্য দিয়েই অর্জন করতে হয়েছে। বিনা রক্ততে কিছুই আমরা পাইনি,’ বলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আবার আমরা সেই বিজয় পতাকা সমুন্নত রেখে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসন তৈরি করে নিয়েছি। আর্থ–সামাজিকভাবে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে সাহিত্য–সংস্কৃতি চর্চার দিক থেকেও আজ আমরা পিছিয়ে নেই। এগিয়ে যাচ্ছি।’
রামেন্দু মজুমদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য পেশ করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর ও বাংলা আকাদেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বাংলা আকাদেমির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দুটি বই দেওয়া হয়। মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’র ইংরেজি অনুবাদ ‘ওশান অফ সরো’ এবং জার্মানি থেকে প্রকাশিত ‘হানড্রেড পোয়েমস ফ্রম বাংলাদেশ’।