• Home  / 
  • জাতীয়  / 

বিএনপির এক নেতার এক পদ নীতিঃ জেলা নেতৃত্বে থাকতে চান অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা!

এপ্রিল ৬, ২০১৭
Spread the love

আয়না২৪ ডেস্ক

‘এক নেতার এক পদ’  ্এমন নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপিতে দুই  পদে আছেন এমন নেতাদের একটি পদ  ছাড়তে কেন্দ্র থেকে পাঠানো  সময়সীমার শেষ দিন ছিল গতকাল বুধবার। এ দিন পর্যন্ত গুটিকয়েক নেতা বাদে প্রায় সবাই নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিকে। গত ২১ মার্চ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বাড়তি পদ ছেড়ে দিতে ১৯  জন নেতাকে শেষবারের মতো চিঠি দিয়েছিলেন। 

 দলীয় সূত্র জানায়, গতকাল রাতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এ নিয়ে কথা হয়েছে। একাধিক পদে থাকা নেতাদের এক পদে রেখে অন্যটি শূন্য করার নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছে বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, যাঁরা স্বেচ্ছায় পদ ছাড়েননি, তাঁদের জন্য কেন্দ্র থেকে একটি পদ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শেষ দিনে দু-একজন বাদে প্রায় সবাই বাড়তি পদ ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি চিঠি দিয়ে কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছেন। যাঁরা ছাড়েননি তাঁরাও কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ পদত্যাগ করে দলের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন। কেউ কেউ মুখে সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। কেউ কেউ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি চেয়ারপারসনের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও শাহজাদা মিয়া গতকাল চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে জেলার সভাপতি থাকতে আগ্রহ দেখিয়ে চিঠি দিয়েছেন। বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ন কুদ্দুসুর রহমান বরিশাল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে আগ্রহী। এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৩০ নেতা কেন্দ্রীয় পদ ছেড়ে জেলার নেতৃত্বে থাকতে আগ্রহ দেখিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আবার বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও জেলার পদ দুটিই আগামী নির্বাচন পর্যন্ত রেখে দেওয়ার অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছেন খায়রুল কবীর খোকন। একই ধরনের চিঠি দিয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী জেলার সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। চিঠিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দলের চেয়ারপারসনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন তাঁরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা  জানান, আগামী নির্বাচন ও জেলা পর্যায়ে সংগঠনে আধিপত্য ধরে রাখতে তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তা ছাড়া অনেক দিন থেকেই তাঁরা জেলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ মুহূর্তে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকলে তৃণমূলের নেতৃত্বে বিশৃঙ্খলা তৈরির শঙ্কা থাকছে বলে তাঁরা মনে করেন। আবার উপদেষ্টার মতো পদগুলোতে নির্ধারিত কোনো দায়িত্ব নেই। তাই জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গেই সময় কাটাতে চান তাঁরা।

জানতে চাইলে রুহুল কবীর রিজভী  বলনে, বুধবার শেষ দিন থাকলেও চিঠি দেওয়ার পর থেকেই নেতারা তাঁদের পছন্দের পদ রেখে বাকি পদ ছেড়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন। বেশির ভাগই দিয়েছেন, কয়েকজন বাকি রয়েছেন।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক পদে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আজ চিঠি দিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ ছেড়ে জেলার পদে থাকার জন্য মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছি। ’

সূত্রমতে, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জেলা বা মহানগর পর্যায়ে ৬১ নেতা একাধিক পদধারী ছিলেন। একাধিক পদ ছাড়তে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দুই দফা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সর্বশেষ একাধিক পদে থাকা নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী জেলা সভাপতি এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ফরিদপুর জেলার সভাপতি শাহাজাদা মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও লক্ষ্মীপুর জেলার সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও নাছিরনগর উপজেলার সভাপতি কাজী আকরামুজ্জামান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঘাটাইল উপজেলা সভাপতি লুত্ফর রহমান আজাদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও হালুয়াঘাট উপজেলার সভাপতি আফজাল এইচ খান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব ও  নরসিংদী জেলা সভাপতি খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাটোর জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-কর্মসংস্থান সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সমবায় সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক ও কলাপাড়া উপজেলা সভাপতি এ বি এম মোশাররফ হোসেন, পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও নাগরপুর উপজেলা সভাপতি গৌতম চক্রবর্তী, শিশুবিষয়ক সম্পাদক ও মির্জাপুর উপজেলা সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, সহ-জলবায়ুবিষয়ক সম্পাদক ও মেলান্দহ উপজেলা সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও বরিশাল দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান বাবু।  

এ প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দীয়  সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলামবলেন, যাঁরা পদ ছেড়েছেন এবং যাঁরা ছাড়েননি তাঁদের চিঠি দলীয় প্রধানের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সেখানেই খালি হওয়া পদ এবং যাঁরা ছাড়েননি তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত  নেওয়া হবে।