কোনো সরকারি চাকরিজীবী তাঁর বাবা-মাকে বৃদ্ধ বয়সে ভরন-পোষণ না দিলে তাঁকে পদোন্নতি না দিতে ও বেতন কেটে রাখার জন্য পরিপত্র জারি করার সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন সুপারিশ করা হয়।
গতকাল বুধবার দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ তিন কমিশনারকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে এই সুপারিশ সম্বলিত কাছে এ প্রতিবেদন পেশ করেন। প্রতিবেদনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি, রাজস্ব, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনাসহ ১০টি দপ্তরের দুর্নীতি প্রতিরোধে ৬৫টি সুপারিশ করা হয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যে সমাজে সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত, সেই সমাজের দুর্নীতি রোধ করা কঠিন।
বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৬ সালে দুদকে জমা পড়া প্রায় ১৩ হাজার অভিযোগের মধ্যে মাত্র ৩৫৯টি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় অভিযোগের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বাড়লেও মামলার সংখ্যা কমেছে প্রায় ৩২ শতাংশ। মামলা ছাড়া এ সময়ে সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে আসা ৫৮৮টি অভিযোগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে। কমিশন মোট ৩৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, যার মধ্যে ১৬৮ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ৮৭ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ছাড়া ১৩ জন জনপ্রতিনিধিও আছেন।
মামলার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতি দমন আইন সংশোধনের কারণে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলাগুলো দুদকের তফশিলের বাইরে (তদন্তের এখতিয়ারের বাইরে) চলে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে কমিশন পর্যাপ্ত দালিলিক প্রমাণ সাপেক্ষে মানসম্মত মামলা দায়েরের বিষয়ে বেশি সতর্ক হচ্ছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, এখন দুর্নীতির মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। দুর্নীতির মামলায় সাজার হার ২০১৬ সালে ছিল ৫৪ শতাংশ।
প্রতিবেদনে শিক্ষা খাতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পৃথক কমিশন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ নিয়ন্ত্রণের জন্য পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রাইভেট প্র্যাকটিস ও চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির কথা এবং দেশের প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্যবিমার কথা বলা হয়েছে।
চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন পদ্ধতির কার্যকারিতা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ক্যাডার (বিসিএস ক্যাডার) কর্মকর্তা নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
ভূমি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সরকারের খাসজমির তথ্যভান্ডার তৈরি, একই ছাতার নিচে ভূমিসংক্রান্ত সব সেবা আনার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণে দুর্নীতি ঠেকাতে নির্মাণকারী ঠিকাদারের সঙ্গে ২০ বছর মেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার কথা বলা হয়েছে।
জনপ্রশাসনে দক্ষতার উন্নয়নে, সচিবালয়ে সনাতনী ফাইল উপস্থাপন পদ্ধতি রহিত করে সপ্তাহে দুদিন সভার মাধ্যমে কার্য নিষ্পত্তির সুপারিশ করা হয়েছে।