‘প্রিন্স’ মুসা : অ্যাম্বাসেডর না ইডিয়ট?

নভেম্বর ২৩, ২০১৬
Spread the love

আয়না ২৪ অনলাইন-

মুসা বিন শমসের কে নিয়ে ডেনমার্কের একটি টেলিভিশনের ডকুমেন্টারির উপর  সাংবাদিক ও লেখক মাসুদ কামাল এর পর্যালোচনা-

প্রথমেই আমি ভিডিওটির বর্ণনা দেব। ২০ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের একটা ভিডিও। এটি একটি রিপোর্ট, একটি টেলিভিশন রিপোর্ট। ডেনমার্কের ‘ডিআর টিভি’তে প্রচারিত হয়েছে। ওই টেলিভিশনের সাংবাদিক ক্রিস্টোফার এরিকসন ডেনমার্ক থেকে ঢাকায় এসেছেন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে, তার ইন্টারভিউ নিতে। তাকে নিয়েই রিপোর্ট। বাংলাদেশের কোনো একজন মানুষকে নিয়ে ডেনমার্কের টিভিতে রিপোর্ট হওয়া, নিশ্চয়ই অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু এই রিপোর্টটি একবার দেখলে সেই বিষয়টিকে মোটেই আর ইতিবাচক মনে হবে না। বরং এমনটাই মনে হবে যে, এই লোকটি বাংলাদেশের মানসম্মানকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের একটা নেতিবাচক চেহারাই বুঝি তুলে ধরেছে।

আলোচিত ব্যক্তিটির নাম মুসা বিন সমশের। নামের আগে অবশ্য একটা ‘প্রিন্স’ আছে, এটা তিনি নিজেই বসিয়ে নিয়েছেন। তিনি কিভাবে প্রিন্স, তার পিতা কবে কোন জায়গার কিং ছিলেন, সেটা কেউ জানে না। তবে তিনি ‘প্রিন্স’, এভাবেই নিজের পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। কেবল প্রিন্সেই তৃপ্ত হননি, প্রিন্স এবং মুসার মধ্যেখানে একটা ‘ডক্টর’ও বসিয়েছেন।

এই ‘প্রিন্স ডক্টর’ বাস করেন রাজধানীর গুলশানে। নিজের সেই বাড়ির নাম রাখা হয়েছে দি প্যালেস। এই প্যালেসেই গিয়েছিলেন ডেনমার্কের সাংবাদিক ক্রিস্টোফার এরিকসন। ভিডিওটিতে পুরো বিষয়টিই বেশ ধারাবাহিকভাবে দেখানো হয়েছে।

বিত্ত বৈভবের উৎকট প্রদর্শনী দেখা গেছে মুসার দি প্যালেসে। এরিকসনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর প্রথমেই মুসার পক্ষ থেকে সাংবাদিককে একটি বড় ম্যাগাজিন টাইপের পুস্তিকা উপহার দেওয়া হয়। সেটা আসলে মুসার প্রতি প্রশস্তিমূলক একটি পুস্তিকা ভিন্ন আর কিছু নয়। রিপোর্টে দেখা গেল মুসা নিজেই সেই ম্যাগাজিন থেকে ইংরেজিতে লেখা কয়েকটি লাইন পড়ে শোনালেন এরিকসনকে। আনাড়ির মতো থেমে থেমে পড়লেন, ‘যখন বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা হবে, একটি নাম একা এবং গর্বিত ভঙ্গিতে সকল মতবাদের উপরে থাকবে, সেটি হলো ড. মুসা বিন সমশের।’ এতটুকু পড়ে মুসা একটু হাসলেন। একটু গর্বের হাসি। মৃদু হাসলেন এরিকসনও, মৃদু সেই হাসি মুসার সকল প্রচেষ্টাকে যেন হাস্যকর বানিয়ে দিল।

তবে এসব স্থূলতার শুরু মাত্র। যে ঘরটিতে এরিকসনকে বসানো হয়েছিল, তার চারদিকে দেয়ালে কেবল মুসারই ছবি। বড় বড় আকৃতির, সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো। এক পর্যায়ে বিদেশি সাংবাদিক মুসাকে জিজ্ঞাসাই করে বসল, চারদিকে নিজের এত এত ছবি, এসব দেখে কি আপনি আনন্দ পান?

সোনালি ফ্রেমে বাঁধানো বড় একটা ছবির নিচে গিয়ে দাঁড়ালেন মুসা ও এরিকসন। ছবিতে মুসা সম্পর্কে কিছু লেখা রয়েছে বড় বড় হরফে। একটি শব্দের প্রতি মুসার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এরিকসন।
: এই শব্দটিকে আপনি কিভাবে উচ্চারণ করেন?
মুসা : হাইডিয়াসলি রিচ।
এরিকসন : এর অর্থ কি?
মুসা : ডেঞ্জেরাসলি রিচ।

আবার মৃদু হাসলেন এরিকসন। কয়েকবার আস্তে আস্তে উচ্চারণ করলেন, ‘হাইডিয়াসলি রিচ, হাইডিয়াসলি রিচ।’

এবার শুরু হলো মুসা কতটা বিপজ্জনক রকম ধনী, তার প্রমাণ প্রদান পর্ব। মুসা তার ওয়্যারড্রব খুলে দেখালেন। তার কত শত স্যুট আছে, তার স্ত্রীর জন্য মুম্বাইয়ের কালা নিকেতন বিশেষভাবে শাড়ি তৈরি করে দিয়েছে ইত্যাদি।

তারপর জুতার প্রদর্শন। জুতার বাক্সগুলো এক এক খোলা হচ্ছে। লোকজন ছোটাছুটি করছে। সবাই কেন এসে জুতার বাক্সগুলো খুলতে সাহায্য করছে না, তা নিয়ে মুসা কিছু গালাগালও করলেন। জুতা নিয়ে শুরু হলো ‘প্রিন্সের’ গল্প।

: প্রতিদিন আমি ডায়মন্ডের জুতা পরি।

এরিকসন : তার মানে আপনি একটা ডায়মন্ডের জুতা পরেন এবং তারপর সেই জুতা পায়ে দিয়ে ময়লার ওপর পা ফেলেন?
মুসা : না, আমার সেই সময় নেই। আমার তো সুযোগই নেই যে রাস্তায় হাঁটব।

এরিকসন : আপনি রাস্তায় হাঁটেন না?

মুসা : না, কেবল মাঝেমধ্যে প্যালেস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠি, শপিং মলে যাই, অথবা কোনো দোকানে যাই।

পরের দৃশ্য ডায়মন্ড খচিত ঘড়ি নিয়ে। বিছানার উপর রোলেক্সের বাক্সগুলোকে রেখে সেগুলো দেখাতে লাগলেন মুসা। প্রিন্সের কর্মচারীরা একের পর এক ঘড়ির বাক্সগুলো খুলে ধরছিল।

এরিকসন একটি ঘড়ি তুলে নিল, পরতে চাইল। পরতে গেয়ে হাত থেকে পড়ে যাচ্ছে এমন ভাব করল। আঁতকে ওঠলেন মহামান্য প্রিন্স। এরিকসন যে তার সঙ্গে কৌতুক করলেন, সেটাও সম্ভবত বুঝতে পারলেন না।

ইন্টারভিউ নিতে যেতে গিয়ে এরিকসন প্রশ্ন করলেন, ‘এই রকম রূপকথার মতো প্রাসাদে বাস করতে আপনার কেমন লাগে, যখন রাস্তার ওপারেই মানুষজন অনাহারে ধুঁকছে?’

মুসা : যারা রাস্তায় ঘুমায় তারা জন্মগতভাবেই ওতে অভ্যস্ত, তারা আসলে ইডিয়ট, তারা কাজ করতে চায় না, তারা ফ্রি খেতে চায়, তারা চিন্তা করতে চায় না, তাদের কোনো এম্বিশন নেই, এমনকি তাদের কোনো স্বপ্নও নেই।

এরিকসন : তাহলে আপনি কি মনে করেন, রাস্তায় যত লোক বাস করে তারা সবাই ইডিয়ট?
মুসা : ইয়েস।

এরিকসন : আমার সঙ্গে ১৩ বছরের এক শিশুর সঙ্গে দেখা হয়েছে, তার নাম শরাফত। সে যদি একদিন কাজে না যায়, তাহলে খেতে পায় না। তাহলে শরাফত কি করবে? কাজ করতে গেলে সে তো শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।

মুসা : কেন, তার মা বাইরে কাজ করতে পারে, গৃহভৃত্য হিসেবে কাজ করতে পারে।

এরিকসন : তার মা যা আয় করে তা পর্যাপ্ত নয়।

মুসা : না, মা পর্যাপ্ত আয় করতে পারে। সে তার ছেলে এবং মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পারে।
এরিকসন : তার অত আয় হয় না, সে তো পারে না।

মুসা : না, তাকে পারতে হবে। আবার শরাফতও তো খ-কালীন কাজ করতে পারে।
এরিকসন : কিন্তু মা যদি পর্যাপ্ত অর্থ আয় না করতে পারে?


মুসা : তাহলে বুঝতে হবে তার মা একজন ইডিয়ট। তার শাস্তি হওয়া উচিত। দেখো আমি তোমাকে বলি, এই রকম অনেক শরাফতের মা-বাবা আছে।

এরিকসন : তারা সবাই তাহলে ইডিয়ট?
মুসা : নিশ্চয়ই।

এই হলো সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের ‘প্রিন্স’র মনোভাব! দারিদ্র্য তার কাছে মূর্খতা। যে শিশুটি গরিব ঘরে জন্ম নিয়েছে, জন্ম যদি তার মূর্খতা হয়ে থাকে, তাহলে তার অপরাধটা কোথায়?

এরিকসনকে নিয়ে মুসার নৈশভোজের দৃশ্যটি অসাধারণ। এরিকসন প্রবেশ করলেন মুসার খাওয়ার ঘরে। বিশাল ডাইনিং টেবিল। টেবিলে নানা বাহারি খাদ্যদ্রব্যের সমাহার। এত বিপুল আয়োজন দেখে এরিকসন বিস্মিত।

এরিকসন : প্রিন্স মুসা, আপনি কি আমাকে বলবেন, আপনি কি সব সময়ই এত এত খাবারের আয়োজন করেন?

মুসা : ইয়েস। সবসময়ই আমি এত খাবার নিয়ে বসি। টেবিলে ২০, ২৫ এবং ৩০ ধরনের খাবার থাকে।

এরিকসন : প্রতি রাতেই।

মুসা : হ্যাঁ, প্রতিরাতেই।

এরপর খাওয়া শুরু হলো। ঠিক তখনই বড় ধরনের একটা হোঁচট খাবেন দর্শকরা। দেখা গেল পাশে বসা মুসার স্ত্রী হাত দিয়ে ভাত চটকে স্বামীকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল সাত-আটজন পরিচারক-পরিচারিকা। ওদের মধ্যে থেকে একজন মেয়ে আবার, এই খাওয়া চলাকালীনই চিরুনি দিয়ে মুসার চুল আচড়ে দিচ্ছে। পরে দেখা গেল মেয়েটি মুসার চেয়ারে দু’হাতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! খেতে খেতে মুসার মুখে ভাত, তরকারি লেগে যাচ্ছে। অপর একজন পরিচারিকা টিস্যু নিয়ে মুখে লেগে থাকা সেসব মুছে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এক উৎকট দৃশ্য।

খেতে খেতে মুসা বলছিলেন : আমার বিয়ের পর থেকে আমি কখনো নিজের হাতে খাইনি। সে (স্ত্রী) আমাকে খাইয়ে দিয়েছে। এটা আমার ভালো লাগে, এটা একটা অভ্যাস, বুঝতে পেরেছ?

এরিকসন : আমার জীবনে এটা হচ্ছে সবচেয়ে ক্রেজি এক্সপেরিয়েন্স।

এরিকসন যখন এই কথা বলছিলেন, তখন তার মুখে ছিল চাপা হাসি। আর এক ভদ্রলোককে দেখা গেল খাওয়ার টেবিলে, মুখ ভর্তি কাঁচাপাকা দাড়ি গোঁফ, তিনিও এরিকসনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হাসলেন! মুসা অবশ্য নির্বিকার। তিনি হয়ত ভাবলেন, বেশ ভালো হয়েছে, ডেনমার্কের সাংবাদিকটাকে ভড়কে দেওয়া গেছে। আমার ধারণা, এই দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে এই দেশের যেকোনো মানুষই লজ্জা পাবেন। একা একা দেখলেও লজ্জা পাবেন।

আর একটি দৃশ্যে দেখা গেল এরিকসন গেছেন মুসার অফিসে। কথা হচ্ছে সেখানে মুসার ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে।

এরিকসন : আমি আপনার বিদেশে অভিবাসী পাঠানোর ব্যবসা সম্পর্কে শুনতে আগ্রহী। আপনার ম্যানপাওয়ার ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাই। এ পর্যন্ত কতজনকে আপনি বিদেশে পাঠিয়েছেন?

মুসা : ৩০ মিলিয়নের (তিন কোটি) বেশি।

এরিকসন : ৩০ মিলিয়ন!

মুসা : হু, ৩০ মিলিয়ন।

বাংলাদেশ থেকে তিন কোটি মানুষকে মুসা বিন সমশের বিদেশে পাঠিয়েছেন! বলে কি লোকটা? এমন চাপাবাজকে আপনি কিভাবে মূল্যায়িত করবেন? আরে বাবা চাপাবাজি করবি নিজের ঘরে কর, বাইরের মানুষের কাছে কেন? ওরা কি ভাববে আমাদের সম্পর্কে?

মুসার আদম ব্যবসায়ের প্রতিষ্ঠান ডাটকো সম্পর্কেও কিছু তথ্য তিনি দিলেন এরিকসনের কাছে। জানালেন এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তিনি কোনো ট্যাক্স নাকি সরকারকে দেন না। ট্যাক্স যাতে না দিতে হয়, সে জন্য এটিকে তিনি রেজিস্ট্রেশন করিয়েছেন পানামাতে। পানামায় অফসোর কোম্পানি হিসাবে নিবন্ধন করিয়েছেন। ফলে এটি এখন একটি ট্যাক্স হ্যাভেন কোম্পানি। ডেনিশ সাংবাদিক জানতে চাইলেন, এই যে আপনি ট্যাক্স দেন না, এজন্য কি আপনি গর্ব অনুভব করেন? এটা কি আপনি ঠিক করছেন? জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো করে বললেন মুসা, যদি ট্যাক্স না দেওয়ার সুযোগ থাকে, তাহলে কেন দেব?

সাংবাদিক এরিকসন জানতে চাইলেন মুসার পাঠানো নারী-পুরুষরা কেমন আছেন বিদেশে? বিশেষ করে যখন শোনা যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে অনেক নারী ‘যৌনদাসী’ হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে উদ্ভট একটা ব্যাখ্যা দিলেন মুসা। বললেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিবেশটাই এমন। সেখানে তাদের মা এবং মেয়েরা তাদের নিজেদের ঘরেই নিরাপদ নয়। আর তাছাড়া এরকম পরিবেশ তো বাংলাদেশেও রয়েছে, এখানেও তো মেয়েরা নিরাপদ নয়। তাই এটাকে অতটা ভয়াবহ হিসাবে দেখা ঠিক হবে না!

এতসব সিরিয়াস প্রসঙ্গের মধ্যেও মুসা কিন্তু জানাতে ভুল করলেন না যে, তিনি নাকি প্রতিদিন গোলাপের নির্যাস দিয়ে গোসল করেন। বিস্মিত এরিকসন জানতে চাইলেন, কেন?

মুসার উত্তর : কারণ এটা আমি পছন্দ করি। এটাই আমার স্টাইল!

এতসব দৃশ্য ও ঘটনাপ্রবাহের পর এরিকসন করলেন সেই মোক্ষম প্রশ্নটি। মুসার কাছে জানতে চাইলেন-যখন আপনার মতো মানুষ, যারা বিপজ্জনক রকম ধনী, যাদের জুতাতে ডায়মন্ড থাকে, ঘড়িতে ডায়মন্ড থাকে, কলমে ডায়মন্ড থাকে, সর্বত্র সোনার ছড়াছড়ি, এমনকি বেল্টে পর্যন্ত ডায়মন্ড, এই অবস্থায় আমরা কেন আপনাদেরকে, বাংলাদেশের মানুষকে বৈদেশিক সাহায্য দেব?

এই প্রশ্নের কোনো জবাব কি আছে মুসার কাছে? আমার তো মনে হয়, প্রশ্নটি এই দেশের সরকারকেও করা হয়েছে। সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, এত হাজার কোটি টাকা যার আয়, কোটি কোটি টাকা যে ব্যয় করে তার অপ্রয়োজনীয় বিলাস ব্যসনে, তার কাছে থেকে সরকার কেন কোনো ট্যাক্স আদায় করতে পারছে না? এমন অকর্মণ্য সরকারকে কেন উন্নত দেশগুলো সাহায্য-সহযোগিতা করবে?
ডেনমার্কের টেলিভিশনের এই ইন্টারভিউ ছাড়াও মুসা বেশ কয়েকবার এসেছে স্থানীয় মিডিয়াতে। একবার সে আওয়াজ দিল, সুইস ব্যাংকে নাকি তার সাত বিলিয়ন ডলার আটকা পড়ে আছে। সেই অর্থ উদ্ধার হলে সেখান থেকে তিন বিলিয়ন ডলার সে পদ্মা সেতুতে দিতে চায়। একথা বলতে গিয়ে কিছুটা ভাব নিয়ে বলল, তিন বিলিয়ন ডলার নাকি তার কাছে তেমন কোনো টাকা নয়।

পদ্মা সেতুর কাজ চলছে। এ পর্যন্ত প্রিন্স মুসা কি সেখানে একটি পয়সাও সেখানে দিয়েছে? দেয়নি এবং দেবেও না। সবই তার চাপাবাজি।
পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কিছু চাপাবাজ তো থাকতেই পারে। কিন্তু তারা ঘরে থাকলেই পারে। মিডিয়াতে কেন আসবে? ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াতে কেন? ঠিক এই জায়গাটিতেও আপত্তি আমাদের। মুসা বিন সমশেরের মতো মানুষ কি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে? এই দেশের মানুষের প্রকৃত চেহারার প্রতিফলন কি দেখা যায় এই অসুস্থ মানসিকতার লোকটির মধ্যে? বলছি না যে, এই দেশের সকলেই খুব হতদরিদ্র। এমনও বলছি না যে, আমরা এখনো বৈদেশিক সাহায্যের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি। কিন্তু এতটুকু তো দায়িত্ব নিয়েই বলতে পারি, এই দেশে মুসার মতো চাপাবাজ, বিকৃত মানসিকতার, বিপজ্জনক রকম ধনী আর একটিও নেই। সে দেশের খেটে খাওয়া মানুষকে ঢালাওভাবে ‘ইডিয়ট’ বলে, বলতে গিয়ে সেন্সেবল মানুষের কাছে নিজেকেই যে ইডিয়ট হিসাবে প্রমাণ করে ফেলে, সেটাও বুঝতে পারে না।

তিন বিলিয়ন ডলার যার কাছে তেমন কোন অর্থই নয়, সে কেন ট্যাক্স দেয় না? হাকিমপুরি জর্দার মালিক কাউছ মিয়ার একটা ইন্টারভিউ সেদিন দেখলাম। প্রিন্স মুসা দেশকে কোনো ট্যাক্স দেয় না, আর এই কাউছ মিয়া দেশের সর্বোচ্চ ট্যাক্সদাতা। ইন্টারভিউতে দেখলাম কাউছ মিয়া কাঠের একটা চেয়ারে বসে, অতি সাধারণ একটি পাঞ্জাবি পরে আন্তরিক ভঙ্গিতে কথা বলছেন। ওনার আংটি, ঘড়ি, চশমা, বেল্ট, কিংবা অন্য কোনো সংবেদনশীল জায়গায় ডায়মন্ড তো চোখে পড়েনি। ওনার আসলে সেসব পরার দরকারই পড়ে না। কারণ উনি নিজেই ডায়মন্ড। বাড়তি এইসব অলঙ্কার এই সব মুসাদের লাগে। দুনিয়াজোড়া মানুষের কাছে এই কাউছ মিয়াই বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর, আর বিপজ্জনক ধনী মুসারা হচ্ছে এক একজন ইডিয়ট।