• Home  / 
  • জাতীয়  / 

প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবেঃ খালেদা জিয়া

Spread the love

আয়না২৪ প্রতিবেদন

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনবো।’ বুধবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ নামের রূপকল্প ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। 
বেগম জিয়া  বলেন, বিএনপি বিশ্বাস করে, জনগণ সব উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। যেসব বাধা জনগণের মেধা, শ্রম, উদ্যোগ ও উৎসাহকে দমিয়ে দেয়, সেগুলোকে দূর করে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি ‘ভিশন ২০৩০’ প্রণয়ন করেছে।
 
বিএনপি নেত্রী বলেন,  প্রধানমন্ত্রীর একক নির্বাহী ক্ষমতা’ দেশে  একনায়কতান্ত্রিক শাসনের জন্ম দিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতায় ভারসাম্য আনবে।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, সংবিধানে গণভোটব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করা হবে, জাতীয় সংসদকে সব জাতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা, জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে জাতির কাছে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ জন্য সুনীতি, সুশাসন ও সুসরকারের সমন্বয় ঘটাবে বিএনপি। দলটি রাজনৈতিক, সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে চায়।

রূপকল্পের মধ্যে আরও রয়েছে—দেশের জনগণের হাতে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায় বিএনপি, দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে পদ্ধতিগত ও আইনের সংস্কারের পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পালের পদ সৃষ্ট করা হবে, জনপ্রশাসন, বিচার, পুলিশ, ও কারাগার—এ চার প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছ, দক্ষ, আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে, সব ধরনের কালাকানুন বাতিল করা হবে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, ও খুন এ অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে, বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে।

সুশাসনের প্রসঙ্গে রূপকল্পে আরও বলেন, মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের সর্বজনীন ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হবে, দলীয় বিবেচনার ঊর্ধ্ব উঠে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নীতিবোধ, দেশপ্রেম , বিচার-বোধ ও সুনামের কঠোর মানদণ্ডে যাচাই করে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ করা হবে, অধস্তন আদালতকে নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় স্থাপন করা হবে, সব বিচার প্রশাসন ও বিচার প্রক্রিয়াকে পরিপূর্ণভাবে ইলেকট্রনিক বা অললাইন ব্যবস্থায় আনা হবে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক যোগ্য বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে মামলার জট কমিয়ে আনা হবে, বিচারব্যবস্থায় সংস্কারের জন্য উচ্চপর্যায়ের জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করা হবে, পুলিশ বাহিনীকে একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে, পুলিশের কনস্টেবল বা ট্রাফিক পুলিশ এবং এএসআই পর্যন্ত নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে একটানা আট ঘণ্টার বেশি দায়িত্ব দেওয়া হবে না, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে, একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, গতিশীল, মেধাবী জবাবদিহিমূলক যুগোপযোগী ও গণমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজনীয় উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হবে।

পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে  তিনি বলেন, অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা হবে।  তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়ন শ্রেয় এই ধারণা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করবে।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা পঞ্চদশ সংশোধনী সংস্কার করা হবে বলে অঙ্গীকার করেন বিএনপি নেত্রী। ঘোষিত রূপকল্পে ২৫৬টি পয়েন্ট তুলে ধরা হয়।  

খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি জণগণের হাতেই রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে চায়। আমরা ওয়ান ডে ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাসী নই। জনগণের ক্ষমতাকে কেবল ভোট দেওয়ার দিনে আবদ্ধ রাখতে চাই না।’
বিএনপির ‘ভিশন-২০৩০’ জাতির সঙ্গে তামাশা 
এদিকে   বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০কে মেধাহীন, অন্তঃসারশূন্য, দ্বিচারিতাপূর্ণ ও জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রলাপ হিসেবে আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ বলেছে, এ ভিশন একটি ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন; এ বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। জাতির সাথে এটি একটি তামাশা ও প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি’র ভিশন হচ্ছে হাওয়া ভবন বানিয়ে লুটপাট, দুর্নীতি আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার ভিশন। গতকাল বুধবার রাতে ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, পরের মেধাস্বত্ব চুরি করা একটি নৈতিক অপরাধ। এটা এক ধরনের পলিটিক্যাল ডিসঅনেস্টি। একটি রাজনৈতিক দল কতটুকু দেউলিয়া হলে অপর একটি রাজনৈতিক দলের দেওয়া আইডিয়া              নির্লজ্জভাবে চুরি করতে পারে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির সামনে ‘ভিশন-২০২১’ তথা রূপকল্প-২০২১ উপস্থাপন করেছিলেন। ইতিপূর্বে কোনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কোনো ধরনের রোডম্যাপ উপস্থাপন করেনি। জনগণ ২০০৮ সালে নিরঙ্কুশভাবে শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর ওপর আস্থা স্থাপন করে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছে। জনগণ নিরবচ্ছিন্নভাবে গত ৯ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করেছে একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কী ‘ভিশন’ থাকা উচিত। শেখ হাসিনা শুধু কাগজে-কলমে নয়, স্বপ্নে নয়, বাস্তব অর্থেই তার ভিশন-২০২১ বাস্তবায়ন করে চলছেন। যার প্রতিফলন দেশের আজ সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। এ ভিশন-২০২১ এর কারণেই আজ বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যম বাংলাদেশের এ অগ্রগতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশ আজ একটি অত্যন্ত শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আমরা আশাবাদী, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অগ্রসরমাণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবো এবং ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত হবো।
ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার আজকের বক্তব্য তার দলের অজ্ঞতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করেছে। তিনি অনেক বিষয়ে উপস্থাপন করেছেন যেগুলো ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং চলমান রয়েছে। তাদের কাছে সততার বুলি, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মানবাধিকার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা শ্রবণ জাতির জন্য খুবই অপমানজনক। কারণ তাদের নেতা জিয়াই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বাংলাদেশে বিচারহীনতার নজির স্থাপন করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত চেতনা ও মূল্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানের চরিত্র পরিবর্তন করেছিল। আজকে তারা ঠিক একই কায়দায় বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চায়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির ইতিহাস নেতিবাচক রাজনীতির ইতিহাস; হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির স্রষ্টা বিএনপি। তাদের আন্দোলন করার মতো শক্তিমত্তা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের পদতলে দলিত হয়ে গেছে। ভিশন-২০৩০ সাল পর্যন্ত পৌঁছার পথ তাদের জন্য খোলা নেই।