পর্যাপ্ত বগি আসলেও বাড়ছে না রেল সেবা

জানুয়ারি ২৬, ২০১৭
Spread the love

আয়না ২৪ প্রতিনিধি

রেলপথ মন্ত্রণালয় স্থাপনের পর তৎকালীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে দুটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষণা দেন। ২০১২ সালের ১৫ মে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নতুন আন্তঃনগর ট্রেন  হিসাবে  কালনী  এক্সপ্রেস ট্রেনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

চার বছর এর বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নতুন ট্রেন চালু করতে পারেনি রেলওয়ে। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০০ মিটারগেজ কোচ আমদানি করা হলেও দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুটে নতুন ট্রেন সার্ভিস করতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো.আবদুল হাই বাংলানিউজকে বলেন, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা কোচের একটি চালান এসেছে। এখনই নতুন ট্রেন সার্ভিসের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। রেল ভবন থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর তা কার্যকর করা হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নতুন রেল সার্ভিসের বিষয়ে তিনি বলেন, পর্যন্ত বগি থাকলেও এখনো ইঞ্জিন সংকট রয়েছে। ইঞ্জিনের জন্য অর্ডার দেওয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালের দিকে ইঞ্জিনগুলো আসবে। তখন রেল সেবার মান বেড়ে যাবে।

রেলের পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে নতুন কোচ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা-২ ও সুবর্ণ-২ নামের দুটি ট্রেন সার্ভিসের কথা বিবেচনা করা হয়। এরপর পর্যাপ্ত কোচ প্রাপ্তি সাপেক্ষে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি রাজশাহী পর্যন্ত নতুন ট্রেন দেয়ার পরিকল্পনা হয়।

তবে প্রকৌশল বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক ইঞ্জিন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা না পাওয়ায় শুধুমাত্র চলমান আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে নতুন আমদানি করা কোচগুলো সংযোজনের চিন্তা করছে রেলওয়ে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ সংকট মেটানোর মাধ্যমে সেবার মান বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

রেলের বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ কম্পোজিশন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আন্তঃনগর ট্রেন অগ্নিবীণা, এগারসিন্দুর প্রভাতী, এগারসিন্দুর গোধুলী ও যমুনা ট্রেন শুধুমাত্র ৩টি রেক দিয়ে চলাচল করছে। ট্রেনগুলোর ৩টি রেকে দুটি করে সর্বমোট ৬টি দ্বিতীয় শ্রেণির কোচ রয়েছে। বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেনেও স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশনের চেয়ে ২৪টি কোচ সংকট রয়েছে।

ফলে নতুন আমদানি করা কোচ দিয়ে নতুন একটি রেক (১২ কোচের সমন্বয়ে) তৈরি করে এগারসিন্দুর প্রভাতী কিংবা গোধুলী ট্রেনে যুক্ত করা হবে। অন্যদিকে শিডিউল ওভার ডিও (মেরামতের অপেক্ষায় থাকা কোচ) ৪০টি কোচের পরিবর্তন, নতুন কোচ দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের সুবর্ণ, গোধুলী ও তুর্ণা ট্রেনের নতুন রেক সংযোজনের পর ১৮টি বিকল্প কোচ রাখা হবে মজুদ হিসেবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রেলের বিভিন্ন রুটে ট্রেনের চাহিদা থাকলেও ইঞ্জিন সংকটের কারণে নতুন কোন ট্রেন চালু করতে রাজী নয় কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে চলমান ট্রেনগুলোর মান উন্নয়নের বিষয়েই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ তাদের। কোচ আমদানি হলেও পর্যাপ্ত ইঞ্জিন না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে  নতুন ট্রেন সার্ভিস চালু করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা।

জানা গেছে, পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে দৈনিক ইঞ্জিনের চাহিদা ১৫০টি। ১৫৫টি ইঞ্জিন থাকলেও নিয়মিত ১১০টি ইঞ্জিন প্রাপ্তি সাপেক্ষে রেলওয়ের ট্রেনগুলোর চলাচল ও শিডিউল বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব। সংকটের কারণে প্রতিদিন ১০০-১০৫টি ইঞ্জিন সরবরাহ পাওয়া যায় রেলের প্রকৌশল বিভাগ থেকে। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ৫-১০টি ইঞ্জিন সংকটে থাকে রেলের পরিবহন বিভাগ। ২০১৮ সালের আগে নতুন কোন ইঞ্জিন আমদানির সুযোগ নেই। ফলে এর মধ্যে  দেশের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে কোন নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন রেল কর্মকর্তারা।

চলতি মাসের ৯ এপ্রিল ইন্দোনেশিয়া থেকে ১৫টি মিটারগেজ কোচ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আমদানি করা ১৫০টি কোচের মধ্যে ১০০টি পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের জন্য। বাকি ৫০টি কোচ পশ্চিমাঞ্চল রেলের ব্রডগেজ কোচ। ২০১১ সালে পূর্বাঞ্চলে কোরিয়া থেকে বেশ কিছু ইঞ্জিন আমদানি হলেও কোচ আমদানির পাশাপাশি ইঞ্জিন আমদানি না হওয়ায় রেলে বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয়ের সুফল বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।