আয়না২৪ ডেস্ক
বনানীর হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে আটকে ধর্ষণের বিষয়টি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে সাফাত ও সাকিফ। সিলেট থেকে গতকাল শুক্রবার ঢাকায় আনার পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে তাদের দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে সাফাতকে ছয় এবং সাকিফকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের আইজি একে এম শহীদুল হকও জানিয়েছেন, তদন্ত সংশ্লিষ্টরা তদন্তে ইতিমধ্যে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে।
এর আগে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করার পর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে সাফাত ও সাকিফকে গতকাল ভোরে ঢাকার মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। সিলেট থেকে অন্তত ২০টি গাড়ি বহরের মধ্যে ডিবিতে আনা হয় তাদের। বহরের মাঝখানের একটি মাইক্রোবাসে ছিল সাফাত ও সাদমান। ডিবিতে আনার পর মামলার তদন্তকারী সংস্থা উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের হেফাজতে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল এই দুই আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
জিজ্ঞাসাবাদকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ডিবির কার্যালয়ে আনার পর সাফাত ও সাকিফকে অনেকটা ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। সিলেটে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটকের আগে তারা নিজেদের চেহারায় পরিবর্তন আনতে দাড়ি শেভ করেন। ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে এনে তাদেরকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম দিয়ে সকালের নাস্তা খেতে দেওয়া হয়। নাস্তা শেষে তাদেরকে আরো কিছুক্ষণ বিশ্রাম দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের কথা ‘স্বীকার’ করেন। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তারা কান্নাকাটিও করেন। ধর্ষণের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এক পর্যায়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। তারা বলতে থাকেন, ‘সব দোষ নাঈমের (তাদের বন্ধু)। নাঈমই ওই দুই ছাত্রীকে তাদের কাছে এনেছিল। নাঈম নাকি এরকম অনেক হাইসোসাইটির মেয়েদের অনেক জায়গায় সাপ্লাই দেয়। নাঈম সেভাবেইওই দুই মেয়েকে তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এ কারণে তারা বুঝতেও পারেননি যে এরা ঘটনার শিকার।’ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত তাদেরকে ঘটনার ব্যাপারে থেমে থেমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর মধ্যে তাদের স্বজনরাও খোঁজ খবর নিতে থাকে। বেলা তিনটার দিকে আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়।
এদিকে, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে তদন্ত সহায়ক চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, এ ঘটনায় জড়িত ও এজাহারভূক্ত অন্য তিন আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তারা হলেন, সাফাতের আরেক বন্ধু নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম হাসান মো. হালিম), সাফাতের দেহরক্ষী মো. আজাদ ও গাড়িচালক। এই মামলার তথ্য প্রমাণ এবং ফিজিক্যাল এভিডেন্স যেগুলো আছে (ডিজিটাল এবং মেডিক্যাল ফরেনসিক) সংগ্রহ করা হয়েছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে যে, আসামিরা প্রভাবশালী এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য বলেই আমরা তাদের ধরছি না। এটা ঠিক নয়। পুলিশ তাদের কার্যক্রম পেশাদারিত্বের সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ধর্ষণের ঘটনার পর বনানী থানা পুলিশের কর্তব্য পালনে কোনও অবহেলা রয়েছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ডিএমপির পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।