দেশে ডিগ্রিধারী প্রতি ১০০ জনে ৯ জন বেকার

Spread the love

আয়না২৪

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নতুন শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ১৪ লাখ নতুন শ্রমশক্তি দেশের শ্রমবাজারে যুক্ত হয়েছে, কর্মসংস্থানও হয়েছে ১৪ লাখ। বেকারত্বের হার ৪.৩ থেকে কমে ৪.২ শতাংশ হয়েছে। এরপরও দেশে বেকারত্বের সংখ্যা ২৬ লাখ। এর মধ্যে ডিগ্রিধারী প্রতি ১০০ জনে ৯ জন বেকার। যা শতাংশের হিসাবে উচ্চ শিক্ষিতদের বেকারত্বের হার ৯ শতাংশ। বিবিএস শ্রমশক্তি জরিপ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বেকারত্বের এই হিসাব আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দেয়া মানদণ্ড অনুযায়ী, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ না করলে ওই ব্যক্তিকে বেকার হিসেবে ধরা হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশে সপ্তাহে এক ঘণ্টাও কাজ করতে পারেন না এমন বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ। অন্যদিকে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার কম কাজ করেন অথবা নিজেদের উপযোগী নয়, তাই নতুন কাজ খুঁজছেন এমন ‘আন্ডার এমপ্লয়মেন্ট’-এর সংখ্যা ১৮ লাখ। অর্থাৎ দেশে প্রকৃত বেকারত্বের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪৪ লাখ।
বিবিএস প্রতিবেদন মতে, এ দেশে পড়াশোনা না করলেই কাজ পাওয়ার সুযোগ বেশি। কোনো ধরনের শিক্ষার সুযোগ পাননি, এমন মানুষের মধ্যে মাত্র ২.২ শতাংশ বেকার। ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম তরুণ-তরুণীর মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি বেকার। ২০১৩ সালের হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার।
জরিপ অনুযায়ী, এখন বেকারত্বের হার ৪.২ শতাংশ। তবে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি বেকার। নারীদের বেকারত্বের হার ৬.৮ শতাংশ এবং পুরুষদের ৩ শতাংশ। নারী ও পুরুষ উভয়েই ১৩ লাখ করে বেকার।
বিবিএস শ্রমশক্তি জরিপ হালনাগাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর ১০.৪ ভাগ বেকার।
বিবিএস পরিচালক কবির উদ্দিন বলেন, উচ্চ শিক্ষিতদের মাঝে ১২.১ ভাগ বেকার। তাদের মধ্যে নারীদের হার বেশি, ১৫ শতাংশ। শহর অঞ্চলে বেকারত্বের হার (৪.৪%) গ্রামের তুলনায় (৪.১%) বেশি। দেশের কর্মক্ষম নারীদের ৬.৮ ভাগ বেকার, পুরুষদের মধ্যে ৩ শতাংশ বেকার।
কর্মসংস্থানে নিয়োজিত রয়েছে এমন জনগোষ্ঠীর ৩২.৮ ভাগ রয়েছে কৃষি খাতে। ১৫.৬ ভাগ রয়েছে সেবা খাতে। কারুশিল্প ও এ ধরনের অন্য শিল্পে নিয়োজিত রয়েছে ১৬.২ ভাগ শ্রমশক্তি। ১৪.৪ ভাগ শ্রমিক রয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে, যার ৩০ ভাগ রয়েছে গার্মেন্টস খাতে। তবে মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৩২ ভাগের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।
দেড় কোটি শ্রমশক্তির প্রাথমিক শিক্ষা রয়েছে। ১ কোটি ৭৯ লাখ শ্রমশক্তি মাধ্যমিক গণ্ডি পেরিয়েছেন। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, শ্রমশক্তির ১৫ ভাগ কোনো মজুরি ছাড়াই শ্রম দিয়ে থাকেন, এর বড় অংশ পারিবারিক কাজে নিয়োজিত। তবে পারিবারিক খাতে মজুরি ছাড়া নিয়োজিতদের সংখ্যা ১৮.৯ ভাগ কমেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিবিএসের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৫ লাখ। এর আগের ২০১৩ সালের জরিপে এই সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৮১ লাখ।
২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত দেড় বছরে কর্মসংস্থান বেড়েছে মাত্র ১৪ লাখ, যা নতুন কর্মসংস্থান বলে মনে করে বিবিএস।
এক দশকের ব্যবধানে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সোয়া এক কোটি। ২০০৬ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, তখন দেশে ৪ কোটি ৭৪ লাখ কর্মজীবী মানুষ ছিলেন। ২০১০ সালে এসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৪১ লাখে। ওই সময়ে বছরে গড়ে ১৩ লাখ ৪০ হাজার বাড়তি কর্মসংস্থান হয়েছে।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে চার প্রান্তিকের মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর এই প্রথম প্রান্তিকেই কর্মসংস্থান কম বেড়েছে। আর সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে।
দুই বছরের ব্যবধানে নারী ও পুরুষ উভয়ের গড় মজুরি বা আয় বেড়েছে। শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, পুরুষদের চেয়ে নারীরা কম আয় করেন। নারীদের গড় আয় ১২ হাজার ১০০ টাকা। ২০১৩ সালে আয় ছিল ১০ হাজার ৮১৭ টাকা। এখন একজন পুরুষ গড়ে ১৩ হাজার ১০০ টাকা আয় করেন, দুই বছর আগে ছিল ১১ হাজার ৭৩৩ টাকা।