আয়না২৪ প্রতিবেদন
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু অবশেষে দৃশ্যমান হলো। আজ শনিবার সকালে প্রথম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) খুঁটির (পিলার) ওপর স্থাপন করা হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে ১০টার মধ্যেই পর্যন্ত সেতুটির জাজিরা প্রান্তের ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটির ওপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এই স্প্যান। ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই স্প্যানটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অগ্রগতির আরেক ধাপ এগিয়ে গেল।
এই মহেন্দ্রক্ষটিতে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, সেতু সচিব আনোয়ারুল ইসলাম, সেতুটির প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম,পদ্মা সেতুর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, সেনা বাহিনীর জেনারেল আবু সাইদ, ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানীর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
পরে বেলা সোয়া ১১টায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পাশের সেতুর জাজিরা জেটিতে নেমে সাংবাদিকদের সার্বিক বিষয়ে ব্রিফিং করেন। মন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান বাসানোর মধ্য দিয়ে আকাশে কালো মেঘ কেটে দৃশমান হয়েছে পদ্মা সেতু। সকল বাধা উপেক্ষা করে সেতুর কাজ এগিয়ে চলেছে। যথা সময়েই সেতুর কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। এ পর্যন্ত পুরো সেতুর কাজ সাড়ে ৪৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্প্যানগুলোও উঠবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে খুব শিগগিরই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সেতুর কাজ যাতে এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ না থাকে সেই জন্য তাঁর নির্দেশে অনানুষ্ঠানিকভাবে সেতুর স্প্যান উঠানো হয়েছে। সেতু সচিব বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পিয়ারের গভীরতা বৃদ্ধি বা প্রয়োজন অনুযায়ী তা পরিবর্তন করে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। তার মানে সেতুর ডিজাইনের পরিবর্তন নয়।
এদিকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ার পর প্রকল্পস্থলে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এই সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আনন্দে উদ্বেল। এই দৃশ্য দেখার জন্য অনেকে পদ্মায় আসলেও সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। তবে দূর থেকেই অনেকে এই দৃশ্য অবলোকন করছেন।
পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারবাহী ‘তিয়ান ই হাউ’ জহাজের ৩৬ শ’ টন ক্ষমতার ক্রেনের সাথে এখনও স্প্যানটি বাধা রয়েছে। এটি বেয়ারিংয়ের সঙ্গে নাটবল্ডু ভালোভাবে স্থাপানের পরই ক্রেনটি সরিয়ে আনা হবে।
এর আগে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরের মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের ওয়ার্কসপ থেকে রোববার স্প্যানটি রওনা হয়। রাতে ২৩ নম্বর পিয়ারের কাছে এসে যাত্রা বিরতি করে। পরের সোমবার সকালে রওনা হয়ে দুপুরে এটি ৩০ ও ৩১ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি স্থানে নোঙ্গর করে। পরে শুক্রবার দুপুর ২টায় জাহাজটি স্প্যান নিয়ে হাজির হয় ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি। সন্ধ্যার আগেই খুঁটি দুটির ঠিক এক মিটার ওপরে ঝুলিয়ে রাখে। পরে শনিবার সকাল ৮টায় এটি স্থাপন শুরু করে।
সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, প্রথম স্প্যানটি স্থাপনের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্যান্য স্প্যানও ওঠানো শুরু হবে। ৩৭ থেকে ৪২ নম্বর পর্যন্ত ছয়টি পিয়ার এখন সম্পন্ন পর্যায়ে। শিঘ্রই শেষ হচ্ছে ৩৯ ও ৪০ নম্বর পিলারের কাজ। ৩৮ পিলারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই দুপিলর ধরে আরও দুইটি স্প্যান বসবে শিঘ্রই। স্প্যানের মাঝ বরাবর নীচের লেনে চলবে ট্রেন। ওপরে কংক্রিটের চার লেনের সড়কে চলবে গাড়ি। তাই এই স্প্যানের ওপরে রাস্তা এবং নিচে ট্রেন লাইন স্থাপন করা হবে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় সাড়ে ৪৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুতে মোট ৪২টি পিলার থাকবে। এর মধ্যে ৪০টি পিলার নির্মাণ করা হবে নদীতে। দুটি নদীর তীরে। নদীতে নির্মাণ করা প্রতিটি পিলারে ছয়টি করে পাইলিং করা হয়েছে, যার দৈর্ঘ্য গড়ে প্রায় ১২৭ মিটার পর্যন্ত। একটি পিলার থেকে আরেকটির দূরত্ব ১৫০ মিটার। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে দুটি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। এছাড়া দু’পাড়ের সংযোগ সেতুসহ সেতুটি ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আগামী বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকৌশলীরা জানান, নদীতে মূল সেতুর মোট ২৪০টি পাইলের মধ্যে ৭৫টি পাইল বসেছে। এছাড়াও দু’পারের দু’টি ট্রান্সজিশন পিয়ারের ৩২টির মধ্যে ১৬টি স্থাপন হয়েছে। অর্থ্যাৎ জাজিরা প্রান্তে ৪২ নম্বর পিয়ারের ট্রান্সজিশন পিলারের ১৬টি পাইল বসেগেছে। এখন বাকী মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর ট্রান্সজিশন পিয়ারের ১৬টি পাইল। এটির কাজ এখনও শুরু হয়নি। ডিজাইন চূড়ান্ত হচ্ছে। এছাড়া জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর ১৮৬ টি পাইল বসেছে। এখানে আর মাত্র ৭টি পাইল বাকি সংযোগ সেতুর (ভয়াডাক্ট) জন্য। আর মাওয়ায় এ পর্যন্ত সংযোগ সেতুর ১৭২টির মধ্যে ৭টি পাইল বসেছে।