আয়না২৪ ডেস্ক
গেল কয়েক বছরে সারাদেশে ৩০ হাজারের বেশি জামায়াত-শিবির-বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মী ও সমর্থক আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগে যোগদান করেছেন। অতীত অপকর্ম থেকে রেহাই পাওয়া, দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, আগামী নির্বাচনে জনগণ থেকে দলকে বিচ্ছিন্ন করার টার্গেট নিয়ে তারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়েছেন। আর কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংসদেরাও নিজেদের আলাদা বলয় সৃষ্টি করতে বিএনপি-জামায়াত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের দলে গুরুত্বপূর্ণ পদও দিয়েছেন। এজন্য মাঠ পর্যায়ে এখন আওয়ামীলীগের রাজনীতি নবাগতদের ( হাইব্রিড) দখলে। এতে দলের ত্যাগী নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
এ কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের এত উন্নয়নের পরও তৃণমূলে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
জানা গেছে, তৃণমূল আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা। উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে পদ বেচা-কেনার ঘটনা অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’। অর্থের বিনিময়ে এসব পদে এসেছে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুলিশে নিয়োগসহ স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংসদদের ছত্রচ্ছায়ায় অনুপ্রবেশকারীরাই মূল কলকাঠি নাড়ছেন। তারা নেমপ্লেট ব্যবহার করে নানা বাণিজ্যে লিপ্ত। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা দেশব্যাপী মনিটরিং করে উল্লিখিত চিত্র পেয়েছে।
অবিলম্বে এসব হাইব্রিড ও পরগাছা নেতাদের দল থেকে বের করে না দেওয়া হলে ভবিষ্যতে দলে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা লিখিত আকারে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে জানিয়েছে যে, খুন-খারাবি থেকে শুরু করে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জমি দখল, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, দখলবাজি, নিয়োগ-বদলি বাণিজ্য, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে লুটপাটসহ নানা কর্মকাণ্ডে মূল ভূমিকা পালন করছে এসব অনুপ্রবেশকারী।
জানা গেছে, জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে প্রবেশের ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অধিকাংশ জেলার তৃণমূলে মানা হয়নি।
বিষয়টিকে মোটেও ভালভাবে নেননি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। বেশ কয়েকবার শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের যথেষ্ট নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছেন। নতুন করে দলে লোক নেওয়ার দরকার নেই।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনার পর নতুন কৌশল অবলম্বন করে জামায়াত। চিহ্নিত নেতাদের না ঢুকিয়ে যারা জামায়াতের কর্মী ও সমর্থক তাদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করিয়ে দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে যোগদানের জন্য তৃণমূল আওয়ামী লীগের উদ্যোগে যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, দল শক্তিশালী করতে ২০১১ সালে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করে আওয়ামী লীগ। সারা দেশে দুই টাকা মূল্যের সদস্য ফরম পাঠানো হয়। কিন্তু পরে তা আর বেশি দূর এগোয়নি। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, অভিযান শুরুর পর তা বাস্তবায়নে আর আগ্রহ দেখাননি দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।