গরিবের অ্যাকাউন্টে ১৩০০ কোটি টাকা!

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
Spread the love

আয়না২৪ প্রতিবেদন

সরকার কৃষক ও প্রান্তিক পেশাজীবীদের  ব্যাংকিংসেবার আওতায় আনতে  ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব চালুর উদ্যোগ নেওয়ার পর এখন এসব গরিব-নিম্ন আয়ের  মানুষের হিসাবে জমা হয়েছে এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা।  ব্যাংকে টাকা জমানো দূরের কথা, অ্যাকাউন্ট খোলারই সুযোগ ছিল না দুস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের। স্বল্প আয়ের মানুষের সর্বনিম্ন ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব হিসাব খোলা ও পরিচালনায় কোনো চার্জ বা ফি নেওয়া হয় না। ফলে এ শ্রেণির মানুষের ব্যাংক হিসাব খোলার প্রবণতা বেড়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর আওতায় ব্যাংকগুলোয় হিসাব খুলেছেন ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৩০ জন। এসব হিসাবে জমার পরিমাণ ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোয়।

সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির বড় অংশই ছিল আর্থিক সেবা খাতের বাইরে। তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের আওতায় সময় সময় বিভিন্ন সার্কুলারের মাধ্যমে কৃষক, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাভোগী, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র জীবনবীমা পলিসি গ্রহীতা, অতিদরিদ্র উপকারভোগী, অতি-দরিদ্র মহিলা উপকারভোগী, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির সুবিধাভোগী, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী, তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিক, চামড়া ও পাদুকাশিল্প-কারখানায় কর্মরত শ্রমিক, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ’ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ, স্কুলের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী পথশিশু-কিশোর, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে অনুদানপ্রাপ্ত দুস্থ’ ব্যক্তি, আইলাদুর্গত ব্যক্তি, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ সব প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় হিসাব খোলার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ন্যূনতম ১০ টাকা, ৫০ টাকা এবং ১০০ টাকা জমা দিয়ে এসব হিসাব খোলার নিয়ম করা হয়। এগুলোয় সর্বনি¤œ জমার বাধ্যবাধকতাও তুলে দেওয়া হয়। এসব হিসাবে জমা অর্থের ওপর মুনাফার হার অন্য হিসাবের চেয়ে বেশি দিতে বলা হয়। ফলে এগুলোর আওতায় হিসাব খোলার প্রবণতা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, এসব উদ্যোগের আওতায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৩৯ হাজার ১৫৪ জন হিসাব খোলেন। ওই বছরে তাদের সঞ্চয় ছিল ৬৫০ কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব খুলেছেন ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮০ হাজার ৩৩০ জন। তারা জমা করেন ১ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে বিশেষ সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হিসাবধারীদের ব্যাংকের সঞ্চয় দ্বিগুণ হয়েছে।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, দারিদ্র্য কমানো, টেকসই ও স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির জন্য সোনালী ব্যাংক দরিদ্র ও স্বল্প শিক্ষিতদের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এর জন্য প্রধান কার্যালয়ে পৃথক একটি সেল গঠন করা হয়। গত বছরে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচির আওতায় সোনালী ব্যাংকে ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার মানুষ অ্যাকাউন্ট খোলেন।

বাজেটের মাধ্যমে সরকার বিধবা, বয়স্ক মানুষ, দরিদ্র মা ইত্যাদি শ্রেণির মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। তাদের প্রদত্ত ভাতা ব্যাংক হিসাবে দেওয়া হচ্ছে। এই শ্রেণির মানুষের ব্যাংকে সঞ্চয় সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩৩৯ কোটি টাকা। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৪০ লাখ ৮৮ হাজার ৯৪৩ জন ভাতাভোগীর এ অর্থ জমা রেখেছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ দশমিক ৯০ শতাংশ অতিদরিদ্র। গ্রামাঞ্চলে অতিদরিদ্র মানুষের জীবনযাপনে সহায়তা ও আপদকালীন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মাধ্যমে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এদের দৈনিক ভিত্তিতে ২০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এই শ্রেণির ২১ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪ জনের ব্যাংকে সঞ্চয় ২৬৭ কোটি টাকা।

১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া শুরু হয় কৃষকদের মাধ্যমে। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯০ লাখ ৩৮৮ জন কৃষক এই হিসাবে জমা রেখেছেন ২০৪ কোটি টাকা। গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ৮৯ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৪ কৃষকের জমা ছিল ১৫৯ কোটি টাকা।

মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জমা ছিল ৯২ কোটি টাকা।

তৈরি পোশাকশিল্পের ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭০০ শ্রমিক জমা রেখেছেন ১০৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ২ লাখ ৭৯ হাজার ২ জন শ্রমিক জমা ছিল ৮৫ কোটি টাকা। ১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৭৩ জন প্রতিবন্ধী ১২ কোটি জমা করেছেন। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৪১ জমা ছিল ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় ৪২ হাজার ৪০ জন ৯৮ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র জীবনবীমা কর্মসূচি গ্রহীতারা ৫ কোটি টাকা, এলএসবিপিসি কারিগররা ২ কোটি টাকা, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ৫০ লাখ টাকা জমা রেখেছেন।

উল্লিখিত মানুষের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে কাজ করছে সরকারি ৮ ব্যাংক। এগুলো হচ্ছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেন, আমরা এই ধরনের হিসাব খুলতে আরও নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছি। এগুলো দিয়ে অন্তত ৩টি কোটি মানুষের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১৭টি ব্যাংকে এনজিওদের মাধ্যমে পথশিশু ও শ্রমজীবী শিশু-কিশোরদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৭২ শিশুর হিসাব খোলা হয়েছে। তাদের অ্যাকাউন্টে ২৩ লাখ টাকা জমা হয়েছে।

সরকারি ৬ ব্যাংকসহ বেসরকারি ব্যাংকগুলো হচ্ছে ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, এনসিসি, ওয়ান, পূবালী, সিটি, ট্রাস্ট, আল আরাফাহ ও উত্তরা ব্যাংক।