আয়না২৪ বিশেষ প্রতিবেদক, কুয়াকাটা থেকে
সাগরকন্যা কুয়াকাটাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে বিচ কার্নিভাল। আজ শনিবার থেকে শুরু হওয়া প্রথম এই বিচ কার্নিভালে প্রায় লক্ষাধিক লোক উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, সাংসদসহ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও উপস্থিত হয়েছেন। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বিচ কার্নিভালকে সামনে রেখে নয়নাভিরাম সাজে সেজেছে কুয়াকাটা।
‘মেতে উঠুন উৎসবে, আনন্দ ও উল্লাসে, উপভোগ করুন সপরিবারে’- এমন স্লোগান ধারণ করে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের আয়োজনে হচ্চে মেগা বিচ কার্নিভাল-২০১৭। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। মেগা বিচ কার্নিভাল উৎসব সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ইতিমধ্যে কয়েক দফায় প্রস্তুতিমূলক সভা ও সংবাদ সম্মেলন করেছে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন, ট্যুরিজম ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কুয়াকাটায় প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে।
গতকাল বরিশাল সার্কিট হাউজে মেগাবিচ কার্নিভালের সার্বিক বিষয় নিয়ে বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। উৎসবের শেষ মুহূর্তে দর্শনার্থী ক্রমশই বাড়ায় এর সফলতা নিয়ে আশাবাদী আয়োজকরা। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, কার্নিভালকে প্রাণবন্ত ও অতিথিদের বরণ করতে পটুয়াখালী জেলা সদর থেকে সড়কের একাধিক পয়েন্টে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সৈকতের পশ্চিম ও পূর্বদিকে ২ কিমি. করে এবং কুয়াকাটার প্রবেশদ্বারে সড়কের ২ কিমিসহ ৬ কিলোমিটার আলোকসজ্জা করা হয়েছে। প্রস্তুত হয়েছে মঞ্চসহ নানন্দিক স্টল। আজ সকাল থেকে উৎসব শুরু হয়ে সোমবার রাতে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে বেইজ ক্যাম্প বাংলাদেশের সহকারী পরিচালক সিরাজুল মুস্তাকিম জানান, বেইজ ক্যাম্প বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘কুয়াকাটা মেগা বিচ কার্নিভাল’-এর উদ্দেশ্যে ১২ই জানুয়ারি ভোর ৬টায় ঢাকার জিরো পয়েন্ট (নূর হোসেন চত্বর) থেকে যাত্রা শুরু করেছে পাঁচজন সাইক্লিস্ট। সাইক্লিস্ট শাহজালাল নোমানের নেতৃত্বে জিয়াউল ইসলাম, আদনান হোসাইন, গোলাম রহমান ও মাহাদি হাসান এ সাইকেলযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানানো হয়েছে। কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানিয়েছেন, প্রথম দিন আজ রাতের কার্নিভাল উৎসব মঞ্চে হোটেল মালিকদের আয়োজনে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ও রাখাইন শিল্পীরা পর্যটকদের বিনোদন দেবেন। দ্বিতীয় ও সমাপনী উৎসবে দেশের খ্যাতনামা শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন।
প্রতিদিনের আয়োজনে রয়েছে বিচ ফুটবল, বিচ ক্রিকেট, হা-ডু-ডু, ভলিবল, ঘুড়ি ওড়ানো, দাড়িয়াবান্ধা, ওয়াটার বাইক, এ টিভি রাইডস, বোট বোয়িং, বিচ লাইটিং, ক্যাম্প ফায়ার, সমুদ্রপথে কুয়াকাটার সঙ্গে সুন্দরবন, ফাতরা, টেংরাগিরি, সোনারচর, হরিণখোলা, কটকা ও করমজলের সঙ্গে সি-ক্রুজিং। থাকবে রাখাইনদের হস্তশিল্পে বুননকৃত বস্ত্র ও তাদের ঐতিহ্য পিঠাপুলি এবং হস্তশিল্পের প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে আগত পর্যটকদের পরিদর্শন। পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান জানিয়েছেন, কার্নিভাল উৎসবে অংশ নেওয়া পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন, র্যাব, পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের সমন্বয় নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক একেএম শামিমুল হক ছিদ্দিকী বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটাকে পরিচিত করাসহ ১২ মাসই যাতে পর্যটকদের সমাগম ঘটে এ লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মেগা বিচ কার্নিভাল উৎসব হচ্ছে। এই বিচ কার্নিভালের মাধ্যমে কুয়াকাটার অপরূপ সৌন্দর্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। একই স্থান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার বিরল সুযোগ পর্যটকরা হাতছাড়া করবেন না।