আয়না২৪ প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ওসমান পরিবারের মেয়র পদে পছন্দের প্রার্থী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তালিকায়ও তাঁর নাম ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ তা মানেনি। এমন পরিস্থিতিতে ওসমান পরিবার বেকায়দায় পড়েছেন। আইভীর জনপ্রিয়তার কাছে হেরে আলোচত এই পরিবারটি আইভীকে ঠেকাতে নতুন তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় পার্টিরিএকটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ওসমান পরিবার এই তৎপরতার অংশ হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র পদে একজনকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। তিনি হলেন নারায়ণগঞ্জ সদর আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ এবং শামীম ওসমান বড় ভাই প্রয়াত নাসিম ওসমানের স্ত্রী পারভীন ওসমান।
সরকারদলীয় সাংসদ শামীম ওসমানই মূলত স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করেন। শামীম ওসমানের বড় ভাই নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির সাংসদ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর উপনিনির্বাচনে ছোট ভাই সেলিম ওসমান সাংসদ নির্বাচিত হন।
আইভীর বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করানোর ব্যাপারে গতকাল শনিবার বিকেলে চাষাঢ়ায় রাইফেল ক্লাবে জাপার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সেলিম ওসমান। বৈঠক শুরুর আগে কয়েকটি খণ্ড মিছিল থেকে পারভীন ওসমানের নামে স্লোগান দেওয়া হয়। তাঁরা পারভীনকে মেয়র পদে প্রার্থী করার দাবি তোলেন।
জাপা সূত্র জানায়, এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এত দিন তাঁদের কোনো তৎপরতা বা নির্দেশনা ছিল না। কেন্দ্র থেকেও কোনো নির্দেশনা আসেনি। এখন সেলিম ওসমান প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু জাহের। তিনি বলেন, সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে দলীয় প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁদের দল থেকে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কেন্দ্র এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে বিএনপি মেয়র পদে প্রার্থী করেছে তৈমুর আলম খন্দকারকে। তৈমুর বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। গত শুক্রবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক বৈঠকে তাঁকে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়। কিন্তু তৈমুর এই নির্বাচনে অংশ নিতে তেমন আগ্রহী নন। তিনি বলেন, তাঁকে মেয়র পদে প্রার্থী হতে বলা হয়েছে। তিনি দলের প্রতি অনুগত। তবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় তাঁর প্রার্থী হওয়ার কোনো আগ্রহ নেই। কেন আগ্রহ নেই, সেটাই চেয়ারপারসনকে তিনি বলেছেন। তবে দল যদি তাঁকে প্রার্থী করার ব্যাপারে অনড় থাকে, তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন।
এর আগের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তৈমুর আলম। ভোটের আগের দিন বিএনপি ওই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়। যদিও বিএনপির এই সিদ্ধান্ত নিজের নয় বলে তখন জানিয়েছিলেন তিনি।
অপরদিকে দলের সব নেতা-কর্মীকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চান বর্তমান মেয়র ও আ.লীগের মনোনয়ন পাওয়া মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। বাংলাদেশের এমন কোনো জেলা নেই, যেখানে কম-বেশি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা নেই। নারায়ণগঞ্জও কিন্তু এর বাইরে নয়।
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের দেওভোগে সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৫ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা থেকে হয়তো কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আমার নাম প্রস্তাব করা হয়নি। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় মনোনয়ন বোর্ড আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তৃণমূলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আমার সঙ্গে আছেন।’
আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কাজ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, ‘আমি মনে করি, আনোয়ার কাকা একজন খাঁটি আওয়ামী লীগার। উনি আমার সঙ্গে কাজ করবেন। অন্যরাও যাঁরা আমার সঙ্গে কাজ করতে চান আমি তাঁদেরও স্বাগত জানাই।’