আয়না২৪ প্রতিনিধি,খুলনা
পরিবহন ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ। রোববার সকাল থেকে খুলনা বিভাগের কোনো রুটে যানবাহন চলাচল করেনি। টারমিনাল ও স্টপেজগুলোতে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফলে থমকে গেছে জনজীবন। ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রী।
যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত চুয়াডাঙ্গার বাসচালক জামির হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রোববার সকাল ৬টা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দশ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয় শনিবার যশোরে অনুষ্ঠিত পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের আঞ্চলিক কমিটির সভা থেকে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী যে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন, তার জন্য চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের ওই বাসচালককে দায়ী করে মানিকগঞ্জের আদালত যাবজ্জীবন কারাদ- দেন গত বুধবার।
যশোর থেকে হঠাৎ ডাকা ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রী। সকাল থেকে খুলনা ও যশোরসহ বিভাগের ১০জেলার বাস টারমিনালসহ বিভিন্ন স্টপেজে বহু যাত্রীকে ভিড় করতে দেখা যায়। কিন্তু কোনো যানবাহন ছেড়ে না যাওয়ায় তারা বিপাকে পড়েন।
টারমিনালে আসা ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা বলেছেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের ধর্মঘট ডাকার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। তাই অবিলম্বে এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা উচিত।
অন্যদিকে পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, যে ধারায় বাসচালক জামির হোসেনের বিচার হওয়ার কথা, সে ধারায় বিচার না করে অন্য ধারায় বিচার করে তাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়েছে। মাথায় যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ নিয়ে তারা গাড়ি চালাবেন না।
সড়ক দুর্ঘটনায় সাংবাদিক মিশুক মুনীর ও চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদসহ ৫জন নিহত হওয়ার মামলায় বাস চালক জমির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের প্রতিবাদে রোববার সকাল থেকে খুলনা বিভাগের দশ জেলায় অনির্দিষ্টকালের ডাকা পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটে বেনাপোল চেকপোস্টে আটকা পড়েছে ভারত ফেরত শত শত পাসপোর্টধারী যাত্রী। অপর দিকে আমদানিকৃত মালামাল নিয়ে প্রায় চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে বেনাপোল বন্দরে।
বেনাপোলের সোহাগ পরিবহনের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম জানান, মালিক পক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে বেনাপোল থেকে সব রুটে পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর থেকে কোন পরিবহন ছাড়বেন না। ভারত থেকে ফিরে আসা যাত্রীরা কেউ বিকল্প উপায়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন আবার কেউ কেউ পরিবহন কাউন্টার, বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে, চায়ের দোকানে অপেক্ষা করছেন।
আবাসিক হোটেলগুলোতেও কোনো সিট খালি না থাকায় রোগী এবং বৃদ্ধরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছের। যাত্রীদের জন্য নির্মিত ৩তলা বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক প্যাসেনজার টার্মিনালটি বন্দর কর্তৃপক্ষ দখল করে রাখায় যাত্রীরা কোথাও বিশ্রাম নিতে পারছে না।
বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন জানান, পরিবহন শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাস হচ্ছে। যে সব ট্রাক বন্দর থেকে পণ্য লোড করছে তারা ধর্মঘট শেষ হওয়ার আশায় বন্দরেই অপেক্ষা করছে। যদি ধর্মঘট দ্রুত প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে বন্দরে ভয়াবহ পণ্যজটসহ যানজটের আশংকা রয়েছে।
বেনাপোল সি এন্ড এফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন,ধর্মঘটের ফলে বেনাপোল বন্দরে প্রায় চার শতাধিক ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দর এলাকায় আটকা পড়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কাঁচামাল ও জরুরি অক্সিজেন এবং পচনশীল বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। শ্রমিক ধর্মঘট দ্রত সমাধান না হলে আটকে থাকা পণ্য পচে ব্যবসায়ীরা মারাত্বকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
ধর্মঘটকারীদের কঠোর অস্থানের কারণে নগরীর ফুলবাড়ীগেট এবং শিরোমনি এলাকায় সকালে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সড়কে ইজিবাইক চলাচল করলেও রাস্তায় কোন মাহেন্দ্র, অতুল, বেবী, বাস, প্রাইভেটকার, ট্রাকসহ কোন প্রকার যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে ফুলবাড়ীগেট মটর শ্রমিক ইউনয়িন কার্যালয়ের সামনে খানজাহান আলী থানা সড়ক পরিবহন শ্রমিকলীগ এবং ফুলবাড়ীগেট মটর শ্রমিকের নেতা কর্মিরা রাস্তার উপর বসে রাজপথ বন্ধ করে রাখে। ধর্মঘট চলাকালে মোঃ হেলালের সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন মোঃ ফারুক, রানা কাজী, বাদশা মিয়া, সামছু, তারু মিয়া, শামিম, নওশের মোল্যা প্রমুখ। ধর্মঘট পালনে কুয়েট থেকে কোন পরিবহন শহরে যেতে পারেনি। এছাড়া কোন ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ করে ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় যাত্রী সাধারণ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। এই সুযোগে ইজিবাইকগুলো স্বাভাবিকের থেকে ৩ থেকে ৪ গুণ ভাড়া যাত্রিদের কাছ থেকে আদায় করে নেয় বলে অনেক যাত্রি অভিযোগ করেছেন।