তক্ষশীলা – হারিয়ে যাওয়া এক প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়

অক্টোবর ১, ২০১৭
Spread the love

আয়না২৪ ডেস্ক


তক্ষশিলা ছিল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডিতে। বর্তমানে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে— দশরথের পৌত্র এবং ভরত গান্ধার দেশ জয় করে নিজের পুত্র তক্ষের নামানুসারে তক্ষশীলা ও পুষ্কলের নামানুসারে পুষ্কলাবতী নগর স্থাপন করেন।

তক্ষশীলার ইতিহাসঃ মহাভারতের মতে এই স্থান তখন গান্ধারের অন্তর্গত ছিল।অনেকের মতে এই স্থানে তক্ষ নামক একটি জাতি বাস করতো। এই জাতির নামানুসারে এই স্থানের নাম হয়েছিল তক্ষখণ্ড। কালক্রমে তক্ষখণ্ড নামটি তক্ষশীলা নামে পরিচিত হয়।
ঐতিহাসিক প্লিনির মতে খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০-৫৩০ অব্দে পারশ্য সম্রাট কাইরাস ভারত আক্রমণ করেন এবং কপিশা নগরী দখল করতে সমর্থ হন,আরিয়ান এর মতে- কাইরাস কাবুল ও সিন্ধু নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল দখল করে কর আদায় করতেন।
কাইরাসের তৃতীয় উত্তরসূরী সম্রাট প্রথম দারায়ুস খ্রিষ্টপূর্ব ৫২২ অব্দ থেকে ৪৮৬ অব্দের ভিতরে গান্ধার, সিন্ধু-উপত্যাকা এবং পাঞ্জাব দখলে নেন। এরপর জারেক্সিস খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮৬ অব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চলের উপরে আধিপত্য বজায় রাখেন। এই সময় এই অঞ্চলের অন্যান্য এলাকার সাথে তক্ষশিলাও পারস্য অধিকারে ছিল।

তক্ষশিলায় বিদেশিঃ 

খ্রিষ্টপূর্ব ৪০৫ অব্দের দিকে চৈনিক পরিব্রাজক ফা-হিয়েন তক্ষশীলা পরিদর্শন করেন এবং এই স্থানকে অত্যন্ত পবিত্র এলাকা হিসাবে উল্লেখ করেন।

আলেকজান্ডারঃ

খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে মহাবীর আলেকজান্ডার সিন্ধু নদ পার হয়ে তক্ষশিলায় প্রবেশ করেন। এই সময় তক্ষশিলার রাজা অম্ভি আলেকজান্ডারের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে তক্ষশিলায় অভ্যর্থনা করেন।

এরপর অভিসার জাতির নেতাও আলেকজান্ডারের কাছে বশ্যতা স্বীকার করে। আলেকজান্ডার তক্ষশিলা থেকে আরও পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে ঝিলম নদী পার হয়ে পুরুর রাজ্য আক্রমণ করেছিলেন।
আলেকজান্ডারের ভারত ত্যাগের আগে ঝিলম ও বিপাশা নদীর মধ্যাভাগের অঞ্চল পুরুকে এবং সিন্ধু ঝিলম নদীর মধ্যভাগের অঞ্চল অম্ভির কাছে ছেড়ে দেন।

মৌর্য রাজত্বের পত্তনঃ

চন্দ্রগুপ্তের গুরু এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ কৌটিল্যের (চাণক্য) পৃষ্ঠপোষকতায় তক্ষশিলায় রাজত্বের পত্তন করেন চন্দ্রগুপ্ত। কালক্রমে চন্দ্রগুপ্ত বিশাল রাজত্বের অধিকারী হন। চন্দ্রগুপ্ত তাঁর পুত্র বিন্দুসারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর, তক্ষশীলাবাসী রাজশক্তির অত্যাচরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বিন্দুসার তক্ষশীলার বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ২৭৩ অব্দের দিকে বিন্দুসারের পুত্র অশোক রাজত্ব লাভ করেন। তক্ষশিলা বৌদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। অশোক পাটালিপুত্র থেকে তক্ষশিলার ভিতরে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করেন।

তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ছাত্র ভর্তি হতো ১৬ বৎসর বয়সে। এই সময় এরা বেদ অধ্যয়ন করতো। ১৮ বৎসর বয়স থেকে শেখানো হতো শিল্পকলা, তীর নিক্ষেপ, শিকার, আইন, চিকিৎসা এবং সমরবিদ্যা।
উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রগুলো ছিল— বেদ, ভাষা, ব্যাকরণ, দর্শন, চিকিৎসাশাস্ত্র (আয়ুর্বেদ), ধনুর্বিদ্যা, রাজনীতি, যুদ্ধবিদ্যা, জ্যোতিঃশাস্ত্র, হিসাব বিজ্ঞান, গণিত, অর্থনীতি, সঙ্গীত ও হস্তশিল্প। 
প্রায় ১০ হাজারের উপর ছাত্র-শিক্ষকের মুখরিত ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রদের কাছ থেকে শিক্ষা বাবদ এবং থাকা-খাওয়ার জন্য অর্থ গ্রহণ করতো বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শিক্ষক ও বিশ্বদ্যালয়ের অন্যান্য খরচ আসতো রাজকোষ ও ছাত্রদের কাছ থেকে। দরিদ্র ছাত্ররা তক্ষশীলায় নানা রকম কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ মেটাতো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নাই।

চাণক্য (অর্থনীতিবিদ)ঃ

চাণক্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩৭০- খ্রিস্টপূর্ব ২৮৩ ) প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রাচীন তক্ষশীলা বিহারের অর্থনীতি ও রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যক্ষ ছিলেন। মৌর্য রাজবংশের প্রথম রাজা চন্দ্র গুপ্তের মৌর্য তার সাহায্য নিয়ে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩২২ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ২৯৮ সাল পর্যন্ত চন্দ্র গুপ্ত রাজ্য শাসন করেন তিনি চন্দ্র গুপ্ত ও পরবর্তীতে তার ছেলে বিন্দুসারের প্রধানমন্ত্রী ও রাজ উপদেষ্টা ছিলেন।

এই বিজ্ঞ ও প্রতিভাধর ব্রাহ্মণের জন্ম সেকালের তক্ষশীলার ‘চানকা’ গ্রামে খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে , যা থেকে তার অপর নাম ‘চানক্য এর উদ্ভব । বিষ্ণু গুপ্ত নামেও পরিচিত ছিলেনতিনি। কারণ এ নামটিই দিয়েছিলেন তার বাবা মা। এছাড়া তার ছদ্মনাম ‘কৌটিল্য’, যা তিনি তার বিখ্যাত সংস্কৃত গ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্র’ এ গ্রহণ করেছেন।তিনি ‘কূটিলা গোত্র’ থেকে উদ্ভূত ছিলেন, অতএব তা টিকিয়ে রাখার জন্যে তিনি ‘কৌটিল্য’ ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন।

চন্দ্র গুপ্তের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতিঃ
তার অসাধারণ কৃতিত্ব ছিল প্রচণ্ড শক্তিশালী নন্দ বংশের শাসন উৎখাত করে সম্রাট অশোকের পিতামহ চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যকে ভারতের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা।চন্দ্র গুপ্ত মগধের পাটালিপুত্রকে তার রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত করেন। পাটালিপুত্র বর্তমান বিহারে অবস্থিত।।চন্দ্র গুপ্তের দরবারে গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস তার ‘ইন্ডিকা’ গ্রন্থে লিখেছেন তার সময়কালে সমগ্র রাজ্য জুড়ে শান্তি বিরাজমান ছিল, প্রজাদের প্রতি তিনি ছিলেন ন্যায়পরায়ণ এবং রাজ্য বিকশিত হয়েছিল সমৃদ্ধিতে।

কথিত আছে নন্দ বংশের সর্বশেষ রাজা চাণক্যকে অপমান করেছিলেন। চাণক্য এই অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণের প্রতিজ্ঞা করেন। এদিকে তরুণ চন্দ্র গুপ্ত, যিনি নন্দ রাজার সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন, তিনিও ষড়যন্ত্র করছিলেন সিংহাসন দখলের। তার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয় এবং জীবন বাঁচাতে তাকে পালাতে হয়। চন্দ্র গুপ্ত যখন বিন্ধানের জঙ্গলে পলাতক ও নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন তখন ঘটনাচক্রে চাণক্যের সাথে তার সাক্ষাত হয়। চন্দ্র গুপ্ত তার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য চাণক্যকে তার গুরু, উপদেষ্টা ও মন্ত্রণাদাতা হিসেবে মেনে নেন। পরবর্তীতে তিনি চন্দ্র গুপ্ত মৌর্যের প্রধানমন্ত্রী হন।

আলেকজান্ডারের আকস্মিক মৃত্যুতে গ্রিক শাসনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবে বিদ্রোহের সূচনা হয় এবং এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে চন্দ্র গুপ্ত গ্রিক বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে তাদেরকে পরাজিত করেন ও পাঞ্জাবকে নিজ শাসনাধীনে আনেন। পরে চন্দ্র গুপ্ত একে একে পশ্চিম ভারতের সকল রাজ্য বিজয় করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

চাণক্যের অর্থশাস্ত্রঃ
চাণক্যের বিরাট সাহিত্য কর্ম ‘অর্থশাস্ত্র’, যার শব্দগত অর্থ ‘পৃথিবীতে সাধারণ কল্যাণ বিষয়ক বিবরণী।’ এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে কিভাবে একজন শাসককে তার প্রজাদের নিরাপত্তা, কল্যাণ ও জীবন মান উন্নত করার জন্যে কাজ করবেন এবং কিভাবে আরও ভূখণ্ড ও মূল্যবান সম্পদ নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করতে হবে। চাণক্য উপমহাদেশে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম প্রবক্তা এবং তার কিছু নীতি বিশ্বজনীনভাবে প্রযোজ্য।হাজার বছরের অধিক সময়ের ব্যবধানেও সেগুলো গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেনি।

চাণক্য তার কালোত্তীর্ণ গ্রন্থ ‘অর্থশাস্ত্রে’ রাজাকে পরামর্শ দিয়েছেন, “যে রাজা শত্রুর গতিবিধি সম্পর্কে ধারণা করতে পারে না এবং শুধু অভিযোগ করে যে তার পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে, তাকে সিংহাসনচ্যুত করা উচিত।”
অর্থনৈতিক দুর্নীতি সর্বকালেই ছিল এবং চাণক্যের যুগেও তা নতুন কোন বিষয় ছিল না। সে কারণে তিনি লিখেছেন, “সকল উদ্যোগ নির্ভর করে অর্থের ওপর। সেজন্যে সবচেয়ে অধিক মনোযোগ দেয়া উচিত খাজাঞ্চিখানার দিকে। তহবিল তসরুপ বা অর্থ আত্মসাতের চল্লিশটি পদ্ধতি আছে।

চাণক্য তার নীতিকথায় বলেছেন, “বিষ থেকে সুধা, নোংরা স্থান থেকে সোনা, নিচ কারো থেকে জ্ঞান এবং নিচু পরিবার থেকে শুভলক্ষণা স্ত্রী – এসব গ্রহণ করা সঙ্গত।”
“মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়। এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।”
“যারা পরিশ্রমী, তাদের জন্যে কোনকিছু হাসিল করা অসাধ্য কিছু নয়। শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্যে কোন দেশই বিদেশ নয়। মিষ্টভাষীদের কোন শত্রু নেই।”
“মন খাঁটি হলে পবিত্র স্থানে গমন অর্থহীন।”

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের মতোই চাণক্যের চেহারাও সুন্দর বা আকর্ষণীয় ছিলনা এবং দৈহিক গড়নও ছিল আকর্ষণহীন। দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন তিনি, যদিও সক্রেটিসের মতোই পণ্ডিত ও দার্শনিক ছিলেন। সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন যে, “দেহের সৌন্দর্যের চাইতে চিন্তার সৌন্দর্য অধিকতর মোহময় ও এর প্রভাব যাদুতুল্য।” অন্যদিকে চাণক্য ছিলেন দক্ষ পরিকল্পনাবিদ। সিদ্ধান্তে তিনি ছিলেন অটল এবং অর্থহীন আবেগের কোন মূল্য ছিল না তার কাছে। নিজস্ব পরিকল্পনা উদ্ভাবন ও তা বাস্তবায়নে তিনি ছিলেন কঠোর।

জীবকঃ গৌতম বুদ্ধের চিকিৎসক –

এমনই এক মহামানব যিনি ছিলেন গৌতম বুদ্ধের চিকিৎসক। তার নাম – জীবক কোমার ভচ্চ (খ্রীঃ পূঃ ৫৬৬ – ৪৮৬) । বুদ্ধকে কয়েকবার তিনি দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে সারিয়ে তোলেন। কথিত আছে, একবার গৌতম বুদ্ধের চিকিৎসায় জীবক তাঁকে কোন ওষুধ সেবন করতে না দিয়ে, শ্বেত পদ্মের মধ্যে ওষুধ রেখে তার ঘ্রাণের সাহায্যে তাঁকে সারিয়ে তোলেন।

জীবক মগধের রাজা বিম্বিসারের সভায় রাজবৈদ্য নিযুক্ত হন। তাঁর চিকিৎসায় রাজা বিম্বিসার অনেক সময় অনেক কঠিন ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করেন। অবন্তীর রাজা প্রসেনজিৎ ও জীবকের চিকিৎসায় রোগমুক্ত হয়েছিলেন।

জীবককে বুদ্ধ এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে তিনি তাঁর অনুগামীদের মধ্যে জীবককে প্রধান অনুগামী বলে ঘোষনা করেছিলেন। এছাড়া জীবকের কথা শুনে বুদ্ধ তাঁর অনুগামী সন্ন্যাসীদের রোগ প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যায়াম করার নির্দ্দেশ দিয়েছিলেন।

জীবকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নিয়ে একটি গল্প আছে। তখনকার মগধের রাজধানী রাজগৃহের সভাসদ ছিলেন শালাবতি। জীবক ছিলেন এই শালাবতির পুত্র। জন্মের পর তাঁকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এক আবর্জনার স্তুপে। কিন্তু তাঁকে জীবিত দেখে পথচারীরা মগধের রাজা বিম্বিসারের পুত্র রাজকুমার অভয়কে খবর দেন। তিনিই এই শিশুটিকে নিয়ে গিয়ে মানুষ করেন এবং ‘জীবক’ নাম দেন।

বড় হলে চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জনের জন্য জীবক সেই সময়ের আয়ুর্বেদ শিক্ষার পীঠস্থান তক্ষশিলায় যান। সেখানে তিনি ছিলেন সাত বছর। তক্ষশিলায় জীবক গুরু হিসাবে পেয়েছিলেন আত্রেয়কে। ভেষজ বিদ্যায় জীবকের গভীর ও ব্যাপক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় জাতকের একটি গল্পে।

শিক্ষা শেষ করার পর তক্ষশীলার এক বিখ্যাত আচার্য জীবক ও অন্যান্য শিষ্যদের প্রত্যেককে তক্ষশীলার চারিদিকে এক যোজনের (১২ মাইল) মধ্যে নির্গুন কোন উদ্ভিদ বা গুল্ম পাওয়া যায় কি না তা অনুসন্ধান করতে বলেন। অন্যান্য শিষ্যরা প্রত্যেকেই একাধিক নির্গুণ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে আনলেও, অনেক চেষ্টার পরেও খালি হাতে ফেরেন জীবক। এর থেকে ভেষজের প্রয়োগ ও ভেষজের গুণ সম্পর্কে জীবকের জ্ঞানের গভীরতা আচার্য বুঝতে পারেন এবং জীবকের শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়েছে বলে ঘোষণা করেন।

তক্ষশিলার চিকিৎসা বিদ্যার অধ্যাপক আত্রেয় যে চিকিৎসা পদ্ধতির পত্তন করেন তা হল কায় চিকিৎসা (সাধারণ চিকিৎসাবিদ্যা)জীবক আত্রেয়র শিষ্য হওয়া সত্ত্বেও কায় চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে শল্য চিকিৎসাতেও অসাধারণ কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। কথিত আছে বহুবার তিনি মাথার করোটি কেটে ক্ষতস্থান থেকে ক্রিমি বের করে রোগীর শিরঃপীড়া দূর করেন।

রাজগৃহে একবার এক ধনীর স্ত্রীর উদরে অস্ত্রোপচার করে অন্ত্রগুলি তিনি বের করেন এবং তার মধ্যে যে গ্রন্থিগুলি জড়িয়ে গিয়েছিল সেগুলিকে ছাড়িয়ে আবার সঠিক স্থানে সংস্থাপন করেন।
তক্ষশিলা থেকে ফেরার পথে তিনি শুনতে পান যে এক ধনী ব্যক্তির স্ত্রী সাত বছর ধরে এক কঠিন মাথা ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছেন। জীবক কয়েক ধরণের গাছের মূল ও পাতা ঘিয়ের মধ্যে ফুটিয়ে সেও ওষুষ রোগিনীর নাকের মধ্যে দিয়ে প্রবেশ করিয়ে তাঁর মাথা ব্যাথার উপশম করেন।খুশী হয়ে তাঁর স্বামী জীবককে ১৬০০০ স্বর্ণমুদ্রা দান করেন।

তক্ষশিলা থেকে ফিরে মগধে অবস্থানকালে জীবকের চিকিৎসার খ্যাতি সে সময়ে সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল। বৈশালী, বারাণসী, সাকেত, উজ্জয়িণী থেকেও রোগীরা মগধে আসতো জীবকের কাছে চিকিৎসার জন্য।
মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারে জীবক ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ভোজরাজার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করে তাঁকে রোগমুক্ত করেছিলেন জীবক। স্নায়ুতন্ত্রের উপর শল্য চিকিৎসায় যে সব চিকিৎসকরা পথিকৃৎ ছিলেন, জীবক ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

শিশুরোগের চিকিৎসায় জীবক ছিলেন সে সময়ে অদ্বিতীয়। তাঁর রচিত ‘কাশ্যপ সংহিতা’য় বিবিধ শিশুরোগ ও তার প্রতিকারের বিধান উল্লেখ করা আছে। রচিত ‘কাশ্যপ সংহিতা’ চিকিৎসাবিদ্যার এক বিরাট গ্রন্থ। এই গ্রন্থে ন-টি অধ্যায় আছে। (১) সূত্রস্থান, (২) নিদানস্থান, (৩) বিমানস্থান, (৪) শারীরস্থান, (৫) ইন্দ্রিয়স্থান, (৬) চিকিৎসাস্থান, (৭) সিদ্ধিস্থান, (৮) কল্পস্থান ও (৯) খিলস্থান।

চরক( কুষাণ সম্রাট কনিষ্কের ব্যক্তিগত চিকিৎসক)ঃ

২০০ খৃষ্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করা চরক চিকিৎসা শাস্ত্রে তক্ষশীলার আরেক বিস্ময়কর অবদান। যোগ সাধনা চর্চার জন্য অনেকে আবার তাকে চরক মুনি বা ঋষি হিসাবে ডেকে থাকেন। তাঁর অনেক অনুসারী ছিল। ছিলেন তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্র “চরক সংহিতা” রচনা করে।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসাকে এই বই এনে দিয়েছে বৈপ্লবিক ছোঁয়া। প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে প্রথম প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসাবে বিবেচিত হয় এই “চরক সংহিতা”এই গ্রন্থে তিনি ৫০০ ঔষধের বর্ননা লিপি বদ্ধ করেছেন।চরক-সংহিতায় মতে “তাকেই বলে ভেষজ যাতে হয় আরোগ্য”।

চরক ও সুশ্রম্নত সংহিতায় উল্লেখ আছে কাঁচা আমলকির রসের সাথে ২/১ কোয়া রসুন বাটা খেলে যৌবন দীর্ঘস্থায়ী হয়। কোন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনাও একেবারে শুন্যের কোঠায়।
আধুনা বিশ্বে চিকিৎসা শাস্ত্রে যে অংগপ্রতিস্থাপন বা প্লাস্টিক সার্জারি হচ্ছে তার জনক এই মহান চরক।

আত্রেয় পুনর্বসুঃ 

প্রাচীন যুগের গান্ধার প্রদেশেরৎ তক্ষশিলার অধ্যাপকরা ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। খ্যাতনামা চিকিৎসক আত্রেয় এখানেই চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যাপনা করতেন। ঐতিহাসিকরা আত্রেয়কে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পথিকৃৎ বলে থাকেন।

খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠশতকের চিকিৎসাবিদ্যার এই অধ্যাপকের আসল নাম ছিল আত্রেয় পুনর্বসু। ঋষি অত্রির পুত্র ছিলেন তিনি। ঋষি ভরদ্বাজের শিষ্যদের মধ্যে আত্রেয় ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি চিকিৎসাবিদ্যার বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। এর মধ্যে ‘আত্রেয় সংহিতার’ নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই গ্রন্থটি পাঁচটি খন্ডের।
আত্রেয় রোগকে দুভাবে ভাগ করেছিলেন। একভাগে আছে আরোগ্য করা যায় এমন সব রোগ আর আরেকভাগে আছে আরোগ্যের অতীত বিভিন্ন ধরণের রোগ।
আরোগ্য সম্ভব এমন সব রোগকেও তিনি দুভাগে ভাগ করেছেন। এর মধ্যে প্রথমভাগে আছে সেইসব রোগ যা সহজেই যাদুর মত নিরাময় করা সম্ভব।
অন্যভাগে আছে সেইসব রোগ যা অত্যন্ত জটিল এবং কদাচিৎ সারানো সম্ভব। রোগীদেরও তিনি রোগের জটিলতা অনুসারে ভাগ করে তাদের চিকিৎসা আদৌ সম্ভব কিনা তা নির্ধারণ করতেন।

তিনিই প্রথম মানুষের বয়স ও স্বভাবের উপর বাতাস, মাটি এবং ঋতুর প্রভাব বর্ণনা করেন এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন রোগের সম্পর্কের কথা বলেন যা পরবর্তীকালে মহামারী সম্বন্ধীয় রোগের কারণ হিসাবে অনেক চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন।

আত্রেয়র আরেকটি বড় কৃতিত্ব হল স্বাদকে মিষ্টি, তেতো, টক, নোন্‌তা, ঝাল ও সংকোচক (astringent) এই ছয় ভাগে বিভক্ত করা এবং মানুষের শরীরের উপর এই স্বাদগুলির প্রত্যেকটির প্রভাব সম্বন্ধে তাঁর গবেষনা ও পর্যবেক্ষণকে প্রতিষ্ঠিত করা।
গরম ও ঠান্ডা পানি বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করেছেন তিনি। বিভিন্ন প্রকারের দুধ, আখের রস, ভাতের ফ্যান, বার্লি, তেল, ফল, গুড়, মধু প্রভৃতি জিনিষের ভৌত ও ওষধি ধর্মের বর্ণনা পাওয়া যায় তাঁর লেখায়।

বিভিন্ন ধরণের প্রাণী, পাখি, মাছ ও সাপের মাংসের গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে এগুলি খাওয়ার ব্যাপারে একটি নিয়মনীতি তৈরি করেন তিনি। জ্বর, পেটখারাপ, রক্তআমাশা, রক্তস্রাব প্রভৃতি রোগের কারণ ও চিকিৎসা সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা পাওয়া গিয়েছে তাঁর লেখায়। বিভিন্ন ধরণের বিষের প্রতিষেধক সম্বন্ধেও অনেক তথ্য পাওয়া গেছে তাঁর রচনায়।

এইসব কারণে অনেক বিজ্ঞানের আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূলভিত্তি ‘ত্রিদোষ ভাবনা’ বৈদিকযুগ থেকে চালু থাকলেও, আত্রেয়ই প্রথম এই ভাবনাকে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করেন ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় তার প্রয়োগ করেন। চরক সংহিতায় উল্লিখিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ও তার চিকিৎসায় বিভিন্ন ঔষধের ব্যবহারের একটি বড় অংশের দান আত্রেয়র।

আত্রেয়র চিকিৎসা পদ্ধতির কথা তাঁর শিষ্যরা বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। তাঁর শিষ্য অগ্নিবেশ রচিত ‘অগ্নিবেশ তন্ত্র’ কে অবলম্বন করেই চরক ও দৃঢ়বল ‘চরক সংহিতা’ রচনা করেন। আত্রেয়র আরও দুই শিষ্য ভেল ও হারীত রচিত ‘ভেল সংহিতা’ ও ‘হারীত সংহিতা’ অতি মূল্যবান প্রাচীন চিকিৎসা গ্রন্থ। ঐ সময়ের বিশিষ্ট চিকিৎসক জতুকর্ণ, পরাশর ও ক্ষরপাণিও ছিলেন আত্রেয়র শিষ্য।

পাণিনিঃ

প্রখ্যাত সংস্কৃত ব্যাকরণ রচয়িতা। তিনি তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন।পানিনি সম্পর্কে বলতে গেলে সাধারন ভাবে বলা যায় – আমরা আজকে যে বাংলা ভাষায় কথা বলছি তার উতস সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরনবিদ এই বিদ্যান ।

পাণিনির জন্মকাল সম্পর্কে মতভেদ আছে। এই সকল মতভেদ অনুসারে ধরা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০-৪০০ অব্দের মধ্যে পাণিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। গান্ধার রাজ্যের শালাতুর (বর্তমান লাহোরের নিকটবর্তী একটি স্থান) নামক পল্লীকে তাঁর জন্মগ্রহণ জন্মস্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জন্মস্থানের নামে তাঁকে অনেক সময় ‘শালতুরীয়’ নামে অভিহিত করা হয়েছে।

পণি বা পাণিন্‌ একটি গোত্র নাম। সংস্কৃত সাহিত্যে পণি নামে একটি গোষ্ঠীর নাম পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, তিনি ফিনিসীয় জাতিগোষ্ঠীর লোকেরা একসময় ভারত মহাসাগরের উপকূলে বসতি স্থাপন করেছিল। এদেরকে পণি, ফিনিকিয়, পিউনিক ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হতো।

পাণিনির পিতা ছিলেন ফিনিকিয় বা পণি গোষ্ঠীর মানুষ। তাঁর নাম ছিল শলঙ্ক।এই কারণে অনেক সময় তাঁকে শলাঙ্কি বলা হয়। পাণিনির মা ইলেন দক্ষ জাতির কন্যা। অনেকের মতে পাণিনির মায়ের নাম ছিল দাক্ষী। এই সূত্রে অনেকে ক্ষেত্রে তাঁকে দাক্ষীপুত্র বা দাক্ষেয় নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। পাণিনি পারিবারিক সূত্রে বেদোত্তর সনাতন পৌরাণিক ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। মূলত তিনি ছিলেন অহিগলমালার (শিব) উপাসক। সেইজন্য তাঁকে আহিক বলা হয়েছে।

তাঁর শিক্ষকের নাম ছিল উপবৎস। তাঁর রচিত ব্যাকরণের নাম– অষ্টাধ্যায়ী। কথিত আছে, মহাদেবের ঢাকের শব্দে চৌদ্দটি ধ্বনি উৎপন্ন হয়। এই ধ্বনি অনুসারে তিনি শব্দসূত্র তৈরি করেন। একে বলা হয়েছে শিবসূত্রজাল অথবা মাহেশ্বর সূত্র। মূলত এই সূত্রগুলি পাণিনির ব্যাকরণের চাবিকাঠি। শিবসূত্রের প্রত্যেকটির নাম সংজ্ঞা বা সংজ্ঞাসূত্র। এই ১৪টি শিবসূত্র হলো—
১. অ ই উ ণ্
২. ঋ ৯ ক্
৩. এ ও ঙ্
৪. ঐ ঔ চ্
৫. হ য ৱ র ট্
৬. ল ণ্
৭. ঞ্ ম ঙ্ ণ ন ম্ ৮. ঝ ভ ঞ
৯. ঘ ঢ ধ ষ্
১০. জ ব গ ড দ শ্
১১. খ র্ফ ছ ঠ থ চ ট ত ৱ্
১২. ক প য্
১৩. শ ষ স র্
১৪. হ ল্ ।
মনে রাখার সুবিধার জন্য পাণিনি এই সূত্রগুলোকে আরও সংক্ষিপ্ত করে নাম দিয়েছিলেন প্রত্যাহার (সংক্ষেপিত) সূত্র। এক্ষেত্রে প্রতিটি সূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণ যুক্ত করে সংক্ষিপ্ত বা প্রত্যাহার সূত্র হয়েছিল।
প্রত্যহার সূত্র তৈরির বিধি
১. শিবসূত্রের বিচারে প্রত্যাহার সূত্র তৈরি হয়েছে।
২. প্রতিটি প্রত্যাহারের নামকরণ করা হয়েছে শিবসূত্রের প্রথম ও শেষ বর্ণ দ্বারা। যেমন— প্রথম শিবসূত্রটি হলো — অ ই উ ণ্ । এক্ষেত্রে প্রত্যাহরটির নাম হবে অণ্।
৩. ব্যবহারিক ক্ষেত্রে শেষ ব্যঞ্জনবর্ণটি ইৎ হবে, অর্থাৎ অগ্রাহ্য হবে। যেমন প্রথম চারটি শিবসূত্র হলো—
১. অ ই উ ণ্
২. ঋ ৯ ক্
৩. এ ও ঙ্
৪. ঐ ঔ চ্
এই চারটি শিবসূত্রের মিলিত সূত্র প্রত্যাহর হবে অচ্ । এর শেষ বর্ণ চ্ বাদ দিলে পাওয়া যাবে— অ ই উ ণ্ ঋ ৯ এ ও ঐ ঔ। এই বর্ণগুলোই হবে সংস্কৃত ভাষার স্বরধ্বনি। অর্থাৎ অচ্ প্রত্যাহর সূত্র দ্বারা স্বরধ্বনির সংখ্যা পাওয়া গেল। লক্ষ্যণীয় বিষয় যে এই সূত্রে দীর্ঘ, হ্রস্ব, প্লুত স্বরধ্বনির উল্লেখ নাই।

একই ভাবে ৫ম শিবসূত্র থেকে ১৪শ শিবসূত্র থেকে পাওয়া যায় প্রত্যাহার সূত্র হল্। এর অর্থ হলো সমস্ত ব্যঞ্জনবর্ণ। পাণিনি ব্যাকরণে প্রত্যাহার সূত্র মোট ৪৩টি। তাঁর সমগ্র রচনাটি আটটি অধ্যায়ে বিভাজিত এই সূত্রে এই গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে- অষ্টাধ্যয়ী। এই ব্যাকরণের অন্যতম ভাষ্যকার ছিলেন পতঞ্জলি।

পাণিণি সংস্কৃত ভাষার সমন্বিত ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন। সংস্কৃত ছিল তৎকালীন সময়ে ভারতীয় আর্যদের ধর্ম ও সাহিত্যের ধ্রুপদী ভাষা । পাণিণিকে একাধারে সংস্কৃত ভাষার জনক ও প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা দেওয়া হয়। অনেকেই আধুনিক ইউরোপীয় ভাষাবিজ্ঞানের জনক ফার্দিনান্দ সাসুরের ওপর পাণিণির প্রভাব লক্ষ করেছেন । আরেক কীর্তিমান ভাষাবিদ নোয়াম চমস্কি তাঁর গবেষণায় পাণিণির ঋন সরাসরি স্বীকার করেছেন।

পঞ্চতন্ত্র মতে, তিনি সিংহের আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

শেষ কথাঃহাজার বছর ধরে উপমহাদেশের শিক্ষা, শিল্প,বিশ্ব সভ্যতাকে প্রগতির পক্ষে পরিচালিত করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে গেছে সাম্রাজ্যবাদী পারস্য, গ্রীক, রোমান, শক, কুষান, আক্রমণ। এই সব আক্রমনে সৃষ্ট অস্থির রাজনৈতিক আগ্রাসনে ৪৫০ খ্রীষ্টাব্দে সর্ব শেষ আক্রমণটি আসে হুন দের পক্ষ থেকে।স্তব্দ হয় তার পথ চলা।