আয়না২৪ ডেস্ক
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’য় দেশের উপকূলীয় এলাকায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে কক্সবাজারে তিন জন ও রাঙামাটিতে দুই জনের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার সকালে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানলে ওই সময় গাছচাপায় চার জন প্রাণ হারান। আরেক জনের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে।
ভোরে ঝড়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় একটি বাসার ওপর গাছ ভেঙে পড়ে। এতে চাপা পড়ে সাহেরা খাতুন (৬০) নামে এক নারী মারা যান। এছাড়া দুলাহাজরা ইউনিয়নে রহমতউল্লাহ (৫০) আরেকজন গাছচাপা পড়ে প্রাণ হারান। কক্সবাজারের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে ওঠা ময়িরম বেগম (৫০) ঝড়ের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ঝড়ে এখানে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন তিন জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঝড়ে রাঙামাটির বেতবেড়ি এলাকায় নাসিমা আকতার (১৩) ও শহরের আসাম বস্তির হাজেরা খাতুন (৪৫) গাছচাপায় মারা যান।
মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। এতে সাগর উত্তাল হয়ে উঠে। পরে দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতির বাতাস নিয়ে চট্টগ্রাম-রাঙামাটির মধ্যবর্তীস্থানে স্থলভাগে উঠে এসে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়। এর প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টির সঙ্গে শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন সমকালকে এ তথ্য জানান।
এদিকে দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তর এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ কুতুবদিয়ার নিকট দিয়ে কক্সবাজার- চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এটি স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে রাঙামাটি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। স্থল গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘গভীর নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরে ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।’
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে কক্সবাজার- চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। পরে এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হয়।
সারাদেশে নৌ চলাচল বন্ধ ছিল। নৌপথে বিচ্ছিন্ন ছিল বরিশাল বিভাগ। ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে বিভিন্ন জেলার সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আজ বিকেলে তা স্বাভাবিক হয়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বরিশালে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ।
গত শনিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি পরে আস্তে আস্তে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। থাইল্যান্ডের প্রস্তাবে ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোরা’, যার অর্থ ‘সাগরের তারা’।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানা সিডরের গতি ছিল ঘণ্টায় ২১৫ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের ২৫ মে আঘাত হানা আইলার গতি ছিল ১২০ কিলোমিটার। সিডরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ প্রাণ হারান। আইলায় প্রাণ যায় ৩২৫ জনের। নিখোঁজ হন আরও অনেকে। সিডর ও আইলার সময়ও ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়। আট বছর পর আবারও ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আঘাত হানার আগে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
টেকনাফে আহত ২৫ জন হাসপাতালে
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ টেকনাফে আঘাত হানার পর ২৫ নারী-পুরুষকে আহত অবস্থায় টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আট জনের নাম পাওয়া গেছে।
তারা হলেন, শামসু আলম, মো. রফিক, মো. আরমান, সাবান হোসেন, নূর কলিমা, সাঞ্জিদা আকতার, রাজিয়া আকতার ও নূর জাহান।
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক শোভন দাস জানান, ঘূর্ণিঝড়ে দেওয়া ধসে, গাছ পড়ে এবং উড়ে আসা টিনের চালের আঘাতে তারা হন। তাদের চিকিৎসা চলছে।
টেকনাফে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাত হানে। এতে প্রায় তিন হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহমেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোরা আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেন্ট মার্টিন ও শাহপরী দ্বীপে। এ ছাড়া অন্যান্য জায়গায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মোরার আঘাতে প্রায় তিন হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।