হানিপ্রীত কি গ্রেপ্তার!

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
Spread the love

আয়না২৪ ডেস্ক

দুই সাধ্ধীকে ধর্ষণের দায়ে ২০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং ইনসানের পালিত মেয়ে হানিপ্রীত ইনসানকে  হরিয়ানা পুলিশ ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর  মুম্বই পুলিশের হাতে ‘গ্রেপ্তার’ হলেন রাম রহিম সিংয়ের পালিত কন্যা হানিপ্রীত।

মুম্বই বিমানবন্দর থেকে তাঁকে ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। নার্সের ছদ্মবেশে তিনি দেশ থেকে পালাতে চাইছিলেন। যদিও হরিয়ানা পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু স্বীকার করা হয়নি।  মুম্বই পুলিশও এবিষয়ে মুখ খুলছে না। তিনি নেপালে পালাতে চাইছিলেন বলে জানতে পারেন পুলিশের গোয়েন্দারা।এ খবর দিয়েছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের অনলাইন। 

রাজ্য পুলিশের করা মোট ৪৩ জনের হিট লিস্টের শীর্ষে আছেন এই হানিপ্রীত। রাম রহিমের দণ্ড হওয়ার  হওয়ার পর থেকেই হাওয়া হয়ে যান কথিত এই পালিত কন্যা।  

 মোস্ট ওয়ান্টেড হানিপ্রীতের খোঁজে হরিয়ানাসহ ভারতের সবগুলো রাজ্যে তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। বিভিন্ন সূত্রে থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে পুলিশ সন্দেহ ছিল, লুকিয়ে নেপালে পালিয়ে যেতে পারেন হানি। প্রচারিত কিছু ছবি দেখে পুলিশ ধারণা করছে, ডেরা থেকে ‘বোরকা বা মুখোশ’ পরে পালিয়েছেন তিনি।  তবে নেপালের ঠিক কোথায় তিনি লুকিয়ে আছেন, সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত করে কিছু বলছে না।

হরিয়ানা পুলিশের তৈরি করা তালিকার শীর্ষে আছেন হানিপ্রীত।  ৪৩ জনের ওই তালিকায় একমাত্র নারী হিসেবে একেবারে প্রথমে রয়েছে এই পালিতা কন্যার নাম। আর যাদের নাম আছে, তাদের বেশির ভাগই তরুণ। হানিপ্রীত ছাড়া ডেরা মুখপাত্র আদিত্য ইনসানের নামও রয়েছে মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায়। এর আগে হানিপ্রীত ও আদিত্যর নামে লুক আউট নোটিশও জারি করে হরিয়ানা পুলিশ।

মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকার প্রত্যেকের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য পুলিশের অফিশিয়াল ওয়েব পোর্টালেও দেওয়া হয়েছে।


আদালত গত ২৫ আগস্ট রাম রহিমকে ধর্ষণ মামলায় দোষী প্রমাণ করার দিন আদালত চত্বর থেকে তাঁকে নিয়ে পালানোর ছক করেছিলেন হানিপ্রীত। কিন্তু সে পরিকল্পনা সফল হয়নি। এরপর থেকে হানিপ্রীতের কোনো খোঁজ নেই পুলিশের কাছে। পরে লুকআউট নোটিশ জারি করে পুলিশ। এ ছাড়া ওই দিন সহিংস ঘটনা ঘটাতে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ডেরার মুখপাত্র আদিত্য ইনসান ও ধীমান ইনসানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ধীমানকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদিত্য পলাতক।

রাম রহিমের নিত্য ছায়াসঙ্গী ছিলেন তাঁর পালিত কন্যা হানিপ্রীত ইনসান। ‘বাবা’র ভক্তরা তাঁকে ‘বাবার দেবদূত’ বলে চেনেন ও মানেন।

প্রিয়াঙ্কা থেকে হানিপ্রীত
আজ থেকে নয় বছর আগের ঘটনা। গৃহবধূ প্রিয়াঙ্কা তানেজা রাম রহিমের কাছে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে পণ চাওয়ার অভিযোগ করতে। ঘটনাচক্রে প্রিয়াঙ্কার স্বামী ছিলেন ওই ডেরারই কর্মী। বাবাও বিষয়টি জেনে গিয়েছিলেন। তাই তার মনোযোগের পুরো মাত্রাই পেয়ে গেলেন দেখতে সুন্দরী স্মার্ট প্রিয়াঙ্কা। ক্রমে ক্রমে বাবার কাছের মানুষ হয়ে উঠতে থাকলেন।

‘পাপাজ এঞ্জেল‘

এক পর্যায়ে বাবা তাকে দত্তক নেয়ার প্রস্তাব দিলেন। প্রস্তাবে সাড়া দিলেন নজরকাড়া প্রিয়াঙ্কা। বাবা তার নাম পাল্টালেন। রাখলেন হানিপ্রীত ইনসান। কিছুদিনের মধ্যেই হানিপ্রীত নজরে এলেন সব ভক্তের। হানিপ্রীতের সঙ্গে বাবার সম্পর্কও ধীরে ধীরে রহস্যাবৃত হতে থাকলো।

এর মধ্যেই কয়েক লাখ অনুগামী নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন হানিপ্রীত। ওয়েবসাইটে নিজের পরিচয় দিলেন ‘পাপাজ এঞ্জেল‘ বলে। শুধু কি তাই? পাশাপাশি ফিলানথ্রোপিস্ট‚ ডিরেক্টর‚ এডিটর ও অ্যাকট্রেসও হয়ে উঠলেন। পরিচালনা ও অভিনয় করলেন তার বাবাকে নিয়ে তৈরি ছবি ‘মেসেঞ্জার অব গড: দ্য ওয়ারিয়র লায়ন হার্ট’তে।

দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার আগে গত ১৫ অগাস্ট বাবার বয়স অর্ধশতক পূর্ণ হয়। জন্মদিনে বাবা গুরমীতকে শুভেচ্ছা জানান কন্যা হানিপ্রীত। সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, তার জীবনের সব অন্ধকার দিক নাকি উজ্জ্বল করে তুলেছেন বাবা!

ডেরা থেকে স্ত্রীকে কেন ফিরিয়ে নিয়ে যাননি হানিপ্রীতের স্বামী? এমন প্রশ্ন বহুবার উঠেছে। এক্ষেত্রে হানিপ্রীতের স্বামী বিশ্বাস গুপ্তা যৌক্তিক জবাবও দিয়েছেন। বলেছেন, বহুবার চেষ্টা করেছি প্রিয়াঙ্কাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু বাবা তা হতে দেননি। শেষ অবধি হানিপ্রীত নিজেই আর ফিরতে চাননি আমার কাছে।

হানিপ্রীতের স্বামী বিশ্বাস গুপ্তা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে জানিয়েছিলেন, নামেই দত্তক কন্যা‚ আসলে তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত বাবা রাম রহিম গুরমীত এবং এটা তিনি নিজ চোখে দেখেও ফেলেছিলেন ্একদিন। 

এদিকে, চৌকস ছায়াসঙ্গিনী হানিপ্রীতের ওপর বাবা রাম রহিম এতোটাই নির্ভর ছিলেন যে, গ্রেপ্তারের পর বাবার ডেরার দায়িত্বও হানিপ্রীতই পাচ্ছেন বলে নিশ্চিত খরব প্রকাশ হয়। আর হানিপ্রীত বাবার এতোটাই অনিবার্য ছিলেন যে, কারাগারে রাতের শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে তাকে পেতে প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছেন।