আয়না ২৪ প্রতিবেদন
বাংলাদেশের দক্ষিণ প্রান্তের সর্বশেষ জেলা কক্সবাজার। কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হিসেবে পরিচিত। আমাদের পর্যটন নগরী এ কক্সবাজার। কক্সবাজার জেলার অন্যতম একটি দ্বীপের নাম সোনাদিয়া। স্থানীয় ভাষায় সোনাদিয়ার চর বলে। এটি মহেশখালী উপজেলায় অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা বাংলাদেশের একটি প্রাচীন সমৃদ্ধ শহর। রামু উপজেলা তার আদি নিদর্শন। রামুতে স্বয়ং গৌতম বুদ্ধের আগমনের অস্তিত্ব সংরক্ষিত আছে রামকোট বিহারে। প্রাচীন হিন্দু ধর্মীয় সভ্যতার স্মারক ঐতিহ্যবাহী আদিনাথ মন্দির, মহেশখালী সাগর দ্বীপ আদিনাথ পাহাড়ে অবস্থিত।
চট্টগ্রাম ও বাংলায় মুসলমান আগমন ও মুসলমান মিশনারী হিসেবে পরিচিত হযরত বদর আউলিয়া (বদর পীর) সমুদ্র পথে আগমনের চিহ্ন বদর মোকাম কক্সবাজারে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রাচীন আরাকানী সভ্যতার স্মারকসহ পুরো কক্সবাজারে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর স্মারক নিয়ে এই শহর পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। কক্সবাজারের আকর্ষনীয় স্থানসমূহের মধ্যে সোনাদিয়া দ্বীপ অন্যতম। এরপরেও সেন্টমার্টিন দ্বীপ, মহেশখালী দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ, মাতারবাড়ী দ্বীপ, ছেঁড়া দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। নয়নাভিরাম দ্বীপ কক্সবাজারের সোনাদিয়া পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়।
কক্সবাজার যারাই আসেন তারা যদি সোনাদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ না করেন তাহলে পরিপূর্ণতা আসবে না। সৃষ্টির শুরু থেকেই প্রকৃতির অদ্ভুত সব সৌন্দর্য মানুষকে প্রতিনিয়ত কাছে টানছে। যেন স্রষ্টার সৃষ্টি সব কিছু দিয়ে সাজানো হয়েছে কক্সবাজারের দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে জেগে ওঠা সোনাদিয়া দ্বীপ। কক্সবাজার জেলা থেকে মহেশখালীর দূরত্ব ১২ কিলোমিটার মাত্র। কক্সবাজার থেকে উত্তর-পশ্চিমে এবং মহেশখালি দ্বীপের দক্ষিণে সোনাদিয়া দ্বীপটির অবস্থান। আর মহেশখালী থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে সাগরের বুকে সোনাদিয়া দ্বীপটি অবস্থিত। দ্বীপটির আয়তন ৯ বর্গকিলোমিটার।
ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় বনের সমন্বয়ে গঠিত এই সুন্দর দ্বীপটি। সাগরের গাঢ় নীল জল, লাল কাঁকড়া, কেয়া বন, সামুদ্রিক পাখি সবমিলিয়ে এক ধরনের রোমাঞ্চিত পরিবেশ সবসময় বিরাজ করে এই দ্বীপে। এ দ্বীপের পানি এতোটাই স্বচ্ছ ও টলটলে, দেখে মনে হবে যেনো কোনো কাঁচের ওপর দিয়ে নৌযানটি এগিয়ে চলেছে। যা দেখলে শত বছরের দুঃখ-কষ্ট এক নিমিষেই ভুলে যেতে বাধ্য।
সমুদ্র থেকে সৃষ্টি হয়ে ভিতরের দিকে গিয়ে নদীটি কয়েকটি শাখা প্রশাখায় ছড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে সম্ভবত। দুপাশে সবুজ বন। এসব বনে রয়েছে কেওড়া, হারগোজা, উড়িঘাস এবং কালো ও সাদা বৃক্ষ। এই দ্বীপে তেমন জনবসতি এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে এই দ্বীপের বেশির ভাগ লোকই জেলে সম্প্রদায়ের। যাদের জীবিকা নির্বাহ হয় সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণের মাধ্যমে। আরো কিছু লোক দেখা যায় যারা লবণ চাষ করেও জীবিকা নির্বাহ করে। এই দ্বীপে নেই কোনো হাট-বাজার। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের একমাত্র ভরসা ছোট ছোট মুদি দোকানগুলো। দ্বীপটির পশ্চিম দিকে সবুজ ঘাসে মোড়ানো খোলা মাঠ, নির্জনতা ও অফুরন্ত বাতাস, সব মিলিয়ে মন প্রশান্তিতে ভরে যাবে। এই দ্বীপের খোলা মাঠে বসলে মনে হবে যেনো অজানা-অচেনা কোনো দ্বীপে আপনি একা। চারপাশে লাল কাঁকড়ার ছুটাছুটির দৃশ্যগুলো খুবই মনোরম।
সবকিছুই মনে হবে সিনেমার দৃশ্যের মতো। সোনাদিয়া দ্বীপের সূর্যাস্তও অসাধারণ।
সন্ধ্যায় সাদা পালক দুলিয়ে সারি সারি বক উড়ে যায় আপন ঠিকানায়। নীল আকাশের কপালে কে যেন দেয় লাল টিপ। আস্তে আস্তে যখন সূর্য হারিয়ে যায় সাগরের বুকে, তৈরি হয় এক মোহনীয় পরিবেশ।
তবে ছোটখাট বিচ্ছিন্ন চুরি ছাড়া তেমন কোনো বড় ঘটনার নজির নেই। এ দ্বীপে যাওয়ার জন্য ঢাকা চট্টগ্রাম হয়ে দেশের যে কোনো স্থান থেকে বাস বা অন্য কোনো বাহনে করে প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। কক্সবাজার কস্তুরী ঘাট থেকে স্পিডবোট বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে তারপর যেতে হবে মহেশখালী।
মহেশখালী গোরকঘাটা থেকে ঘটিভাঙা পর্যন্ত পথটুকু যেতে হবে বেবিট্যাক্সিতে করে।
যেখানে সৌন্দর্যের হাতছানি আপনার মনকে দেবে প্রশান্তি। দল বেঁধে কিংবা পরিবা-পরিজন নিয়ে সোনাদিয়া দ্বীপে ঘুরে আসতে পারেন। স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে গেলে ভ্রমণ হবে নিরাপদ ও আনন্দময়।