গোলাম সরোয়ার টুকু। বরগুনার তরুণ প্রজন্মের কাছে এক অনুকরনীয় তরুণ, মেধাবী, সৃজনশীল রাজনীতিক। মার্জিত ব্যক্তিত্বের অধিকারি সরোয়ার টুকু রাজনীতিতে সাহসী, পরিচ্ছন্ন ভূমিকার কারণে জেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সমাদৃত।তুখোড় বক্তা হিসেবে তিনি তাঁর রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে তুলে ধরেছেন সেই ছাত্র রাজনীতির সূচনা থেকে। তিনি একাধারে বরগুনা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং তুমুল জনপ্রিয়তার কারণে এই কলেজের ছাত্র সংসদের দুবার ভিপি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেন বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের্।কাউন্সিলরদের বিপুল ভোটে তিনি জয়ী হয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হন। ৯০-এর ছাত্র আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এরপর তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরিবেশ সম্পাদক হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতিতে অবদান রাখেন। ২০০৫ সালে তিনি বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দলকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জেলা সম্মেলনে তিনি পুনরায় একই পদ পান। এবার তিনি বরগুনা-১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি কথা বলেছেন আয়না২৪-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফারজানা সুলতানা…
আয়না২৪ঃ কীভাবে রাজনীতির সাথে যুক্ত হলেন?
টুকু– খুব ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ আমি মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। তখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ওপর অঘোষিত বিধি-নিষেধ ছিল।তারপরেও কালজয়ী এই মহান নেতার ঐতিহাসিক ভাষণ মানুষ ঝুঁকি নিয়ে শুনতো। জাতির পিতার এই ভাষণ আমাকে রাজনীতিতে উদ্ধুদ্ধ করেছে। এরপর স্কুল জীবনেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। বরগুনা জিলা স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতি হই। তৎকালীন সাংসদ সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন অনলবর্ষী বক্তা। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আমি তাঁর বক্তৃতা শুনতাম। মূলত এভাবেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর ভালবাসায় আমি ছাত্র রাজনীতিতে আসি।
আয়না২৪ঃ আপনি কীভাবে একজন তুখোড় বক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করলেন?
টুকু– আমি আগেই বলেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা আমাকে রাজনীতিতে উদ্ধুদ্ধ করেছিল। তৎকালীন সাংসদ সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন অনলবর্ষী বক্তা। স্কুল জীবনে বিভিন্ন জনসভায় যেতাম এবং মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আমি তাঁর বক্তৃতা শুনতাম। বাসায় ফিরে নিজে নিজে তাঁর মতো বক্তৃতা দিতে চেষ্টা করতাম। মূলত এই থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল ভাল বক্তৃতা করার। এখন বলতে বলতে হয়তো ভাল কিছু হয়ে গেছে।
আয়না২৪ঃ আপনার বক্তৃতা নিয়ে এমন কোনো মধুর স্মৃতি আছে যা পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করতে চান?
টুকু– হ্যা, সে রকম একটা স্মৃতি আমার রয়েছে। তখন আমি বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল উপলক্ষ্যে আমি ও বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি (বর্তমান বেতাগী পৌরসভার মেয়র) এ বি এম গোলাম কবির ঢাকা যাই।কাউন্সিলের সম্মেলন কক্ষে আগত অতিথিদের বসার জন্য কিছু চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল আর আমরা বসেছিলাম ফ্লোরে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। সে বারই আমি প্রথম জননেত্রীকে সামনা সামনি দেখার সুযোগ পাই।
নেত্রীর কিছু জরুরী কাজ থাকায় তিনি কাউন্সিলের সভাপতিকে বললেন, তিনি বেশি সময় দিতে পারবেন না। দ্রুত কয়েকজনের বক্তৃতা শুনেই চলে যাবেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি হঠাৎ আমার কাছে এসে বললেন, টুকু তোমাকে একটু পরেই বক্তৃতা দিতে হবে। রেডি থাকো। আমি একদম অপ্রস্তত ছিলাম। তার উপর নেত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে প্রথম বার বক্তৃতা। আমার সাথে থাকা গোলাম কবির বলল, ভাই আল্লাহকে ডাকেন। আমিও আল্লাহর উপর ভরসা করেই স্টেজে গেলাম।
আমি দাঁড়িয়ে মফস্বলের ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম। বক্তৃতার সময় ছিল ৫ মিনিট। আমি ভাবছিলাম কোনোভাবে এই সময়টুকু শেষ করতে পারলে বাঁচি আর কি! তবে যখন আমার বক্তৃতা শেষ করার জন্য ওয়ার্নিং দেওয়া হল, তখন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা আমাকে আমার বক্তৃতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন।
সেদিন আমি প্রায় ২০ মিনিট বক্তৃতা দিই। পুরো সময়টা নেত্রী আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং বক্তৃতা শেষে আমাকে তাঁর কাছে ডেকে আমার সম্পর্কে জানতে চান।এসময় তিনি আমাকে রাজনীতি সম্পর্কে বেশ কিছু উপদেশও প্রদান করেন।
আয়না২৪ঃ বরগুনা থেকে কীভাবে কেন্দ্রীয় ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হলেন?
টুকু– আপনি জানেন, আমি বরগুনা জিলা স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে বরগুনা সদর উপজেলা ছাত্রলীগ এবং পরে বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তারপরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে বিদায় নেওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য আমি ঢাকায় যাই। ঢাকায় গিয়ে ওই বছরেরই আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাই। একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সব নেতারাই আমাকে চিনতেন এবং আমার সম্পর্কে জানতেন। পরের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় পরিবেশ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাকে। দুই দফায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পদে থাকার সময় দেশের সবগুলো জেলা-উপজেলায় ঘুরে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে কাজ করেছি।
আয়না২৪ঃ শেখ হাসিনার নজরে আসলেন কিভাবে?
টুকু– বলা যায় সেই বক্তৃতার পরেই আমি তাঁর নজরে আসি। তাছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনা এমন একজন নেত্রী যিনি সারাদেশের নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে কমবেশি জানেন। তিনি দলবান্ধব নেত্রী। বিশেষ করে ২০০১ সালে তৎকালীন বরগুনা-৩ আসনে আমাদের প্রিয় নেত্রী নির্বাচন করেছিলেন। ওই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেশ কয়েকটি জনসভা পরিচালনার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
আয়না২৪ঃ রাজনীতিতে কাউকে আদর্শ হিসেবে মানেন?
টুকু-বিশ্বের নিপিড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুই আমার রাজনীতির মহান শিক্ষক। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দর্শন আমার রাজনীতির আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার নিবিড় কারিগর দেশরত্ম শেখ হাসিনা এবং তাঁর যোগ্য নেতৃত্ব আমাদের সেই মহান আদর্শিক রাজনীতির আলোকবর্তিকা।
আয়না২৪ঃ আপনি দু বার বরগুনা সরকারি কলেজের ভিপি ছিলেন। কি কারনে ছাত্র- ছাত্রীরা আপনাকে তাঁদের প্রতিনিধি বানিয়েছিল- আপনার কি মনে হয়?
টুকু– ছোটবেলা থেকেই আমি আদর্শিক রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। রাজনীতির গুণগত মান যাতে অক্ষুন্ন থাকে এবং রাজনীতি যেন জনবান্ধব হয়, সে জন্য আমি সব সময় মেধার গুরুত্ব দিয়েছি। অসুস্থ, ভোগবাদী, অস্ত্রনির্ভর রাজনীতি আমি সব সময়ই অপছন্দ করেছি। এখনো সেই লক্ষ্যে অটুট আছি। এ জন্য সব সময়ই আমার প্রিয় সংগঠন এবং কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাকে পছন্দ করতেন, ভালবাসতেন। শিক্ষকেরাও স্নেহ করতেন। আমি মনে করি এসব কারনেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাকে সমর্থন দিয়েছে।
আয়না২৪ঃ সারা দেশে আপনি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কাজ করেছেন। কেমন অভিজ্ঞতা ছিল সেটা?
টুকু– দেখুন, ছাত্রলীগ এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সবগুলো গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। ৮৭ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত যখন ছাত্রলীগের রাজনীতির সক্রিয় কর্মী ছিলাম তখন স্বৈরাচারী সরকারের নানা নিগ্রহ, দমন-পীড়ন আমরা সহ্য করেছি। আমি গ্রেপ্তার হয়েছি।সেটা দুঃসময় থাকলেও তখন দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য এই ত্যাগ ছিল অহংকারের। সেটা নিয়ে আমি আজও গর্বিত। এরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দাযিত্ব পালন করার সময় খালেদা জিয়ার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের দেশজুড়ে আন্দোলন সংগ্রামকে উজ্জীবিত করতে দেশের সবগুলো জেলা –উপজেলায় সাংগঠনিক সফর করে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করতে হয়েছে। মূলত ওই সময় সারাদেশে ছাত্রলীগ আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আর এজন্যই পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দুর্বার সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দিতে পেরেছিল। ওই সময় নানাভাবে আমাদের পুলিশ ও বিএনপির সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে, গ্রেপ্তার-নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কিন্তু এতোসব নির্যাতনের মধ্য দিয়েও ছাত্রলীগের দুর্বার নেতা-কর্মীরা রাজপথ আঁকড়ে ছিল। এই ত্যাগ, এই সংশপ্তক ভূমিকা সত্যি ছাত্রলীগের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। সে সব দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখনো ভাল লাগে যে, সেই সব উজ্জ্বল অধ্যায় সূচনার একজন কর্মী ছিলাম আমি।
আয়না২৪ঃ আপনি তো একজন তরুণ ও উদীয়মান রাজনীতিক। তরুণরা এ দেশ গঠনে কি ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আপনার বিশ্বাস?
টুকু– বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী, দেশরত্ম শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ অর্থনৈতিক, সামাজিক, যোগাযোগ, শিক্ষা, তথ্য–প্রযুক্তিসহ সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। এরইমধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন দেশরত্ম শেখ হাসিনার একমাত্র লক্ষ্য বাংলাদেশকে আধুনিক, উন্নত দেশে পরিণত করা।
এই উন্নয়ন, অগ্রগতির অভিযাত্রাকে এগিয়ে নিতে আমাদের তরুণদের ভূমিকা অপরিসীম। কারণ, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি তরুণ। এজন্য গোটা বিশ্বে আমাদের দেশ এক স্বর্ণালী যুগ অতিক্রম করছে। এই অবারিত সম্ভাবনাকে কাজেলাগাতে হলে আমাদের তরুণদের উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। নিজেদের গড়ে তুলতে হবে যোগ্য, আধুনিক, মার্জিত, সুশিক্ষিত মানবিক মানুষ হিসেবে। প্রযুক্তি জ্ঞান এবং নতুন নতুন চিন্তার আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে প্রত্যেককে একেক জন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণদের সেই উদ্ভাবনী চিন্তা, ধৈর্য্য ও অমিত সাহস আছে। তরুণদের এই ইচ্ছাশক্তিকে প্রেরণা দিতে আমি সব সময় তাদের পাশে আছি এবং আজীবন থাকবো। তাদের সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে আমার সর্বান্ত চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আয়না২৪ঃ নতুন প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কেমন বরগুনা দেখতে চান?
টুকু– দুর্নীতি, অন্যায়মুক্ত একটি সমাজ গঠনে পরিশীলিত এবং সৃজনশীল একটি প্রজন্ম দরকার। আমি খুব সম্ভাবনা দেখি আমাদের তরুণদের মাঝে। তাদের নতুন নতুন চিন্তা, উদ্বাবনী শক্তি আমাকে আপ্লুত ও সাহসী করে। কিন্তু আমাদের এখানে তরুণদের দক্ষতা, জ্ঞান বিকাশের ক্ষেত্রগুলো এখনো তেমন গড়ে ওঠেনি। আমার স্বপ্ন তরুণদের জন্য এসব সুযোগ সৃষ্টি করে আধুনিক বরগুনা দেখতে চাই। সে লক্ষ্যে আমার নিরন্তর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আমি বিশ্বাস করি, তরুণরাই গড়বে স্বপ্নের বরগুনা।
আয়না২৪ঃ জনাব গোলাম সরোয়ার টুকু, আয়না ২৪ পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
টুকু- আপনাকেও ধন্যবাদ। আয়না ২৪ এর জন্য শুভ কামনা।