অনিন্দ্য আফরোজ
এক বছরও কম আগে, রহস্যময় ভাইরাস করোনা সম্পর্কে খুব কমই জানা ছিল। যা প্রথমে চীনের উহানে বেশ কিছু মানুষকে অসুস্থ করে তুলছিল এবং বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল।ভাইরাসের সংক্রমণে গোটা পৃথিবী এখনো স্থবির। মৃত্যু আর আতঙ্কে পৃথিবীর মানুষ চুপসে গেছে। তখন মানুষের মনে আশার আরো জ্বেলেছে করোনা প্রতিরোধী টিকার আবিস্কারের ঘটনা।
যুক্তরাষ্ট্রের মর্ডানা এই আশার আলো প্রজ্জবলনকারীদের একটি প্রতিষ্ঠান। যারা এরইমধ্যে করোনা প্রতিরোধী টিকা আবিস্কার করে তা প্রয়োগ শুরু করেছে। মর্ডানার আবিষ্কৃত করোনা টিকা নিয়ে সাফল্যের নেপথ্যে আছেন ৩৫ বছরের এক নির্বাহী। টিকা দ্রুত তৈরি করা এবং তা তড়িঘড়ি বাজারে আনার জন্যই চেষ্টা করেছেন ওই এই নির্বাহী। তাঁর হ্যামিল্টন বেনেট। হ্যামিল্টনের তৎপরতার জন্য মূলত ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকার পর মডার্নার টিকাও ছাড়পত্র পেয়েছে আমেরিকায়।
হ্যামিল্টন বেনেট প্রত্যাশা করেননি যে তার দলের কাজ এতো দ্রুত সফলতা পাবে। তবু অদম্য এই নারী দিনরাত কাজ করে গেছেন তাঁর দল নিয়ে। অনেক অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার মাঝে, বেনেট মহামারীটির অদম্য নায়ক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। জীবন বাঁচাতে পারে এমন একটি ভ্যাকসিন গবেষক দলকে সহায়তা করার জন্য সারা বছর ধরে দৃতার সঙ্গে এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করে পর্দার পিছনে কাজ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্টের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট্ট সংস্থা মডার্না।করোনা অতিমারির শুরু থেকেই সংস্থাটি টিকা তৈরির গবেষণা শুরু করে। আর সংস্থাটির নির্বাহী হ্যামিল্টনের গতিশীল নেতৃত্ব আর তৎপরতার জন্যই টিকা তৈরি থেকে তা বণ্টনের প্রক্রিয়া গতি পেয়েছে। এই সব দিক খতিয়ে দেখেই এই সংস্থাকে ছাড়পত্র দিয়েছে আমেরিকার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
১০ বছরেরও বেশি এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণা কার্যের অভিজ্ঞতা রয়েছে হ্যামিল্টনের। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এনভাইরনমেন্টাল হেলখ অ্যান্ড মাইক্রো বায়োলজিতে স্মাতক হওয়ার পর হ্যামিল্টন লন্ডনের স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন থেকে এপিডেমিওলজিতে ফের স্মাতক ডিগ্রি নেন এবং তারও পর ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস। গত চার বছর ধরে তিনি মডার্নার টিকা বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মডার্না এই টিকা নিয়ে গবেষণা শুরু করে। হ্যামিল্টন এবিসি নিউজকে বলেন, জানুয়ারিতে প্রথম করোনার পূর্ণাঙ্গ জিনোম পাওয়া যেতেই আমরা গবেষণা শুরু করি।প্রতিদিনই আমরা কাজের গতি বাড়িয়েছি। এই প্রকল্পের সঙ্গে এতটাই জড়িয়ে আছি যে, সকাল ৭টার মধ্যে অফিস আসি। রাতে বের হই সাড়ে ১০টার পর। পরের দিন আবার সকাল ৭টার মধ্যে অফিস। প্রতিদিনই চেষ্টা করি নিজেদের ডেড লাইন ঠিক রাখতে।
তিনি বলেন, অতিমারির সমস্যা আমরা অভিনবভাবে মোকাবিলা করতে চলেছি। আমরা না পারলে সম্ভবত অন্য কেউ তা পারবে না।