ভোলা প্রতিনিধি
দেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলা’র একটি ছোট্ট স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সবাই মিলে করে ফেলেছেন এক অসাধারন কাজ। পুরো দেশের জন্য যা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন শিক্ষানুরাগীরা। করোনার এই দুঃসময়ে ঈদের পূর্বে তাঁরা তাঁদের প্রিয় বিদ্যালয় “আদর্শ একাডেমীর” সকল শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন নগদ অর্থ সহায়তা।
স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যবধি সকল প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত ভাবে মাত্র কিছুদিন আগে “বিদ্যালয়ের জন্য ভালোবাসা” শিরোনামে শিক্ষকদের জন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করেন। ফেসবুক ও মুঠোফোনের মাধ্যমে সকল ব্যাচের সাথে যোগাযোগ করে মাত্র ১০ দিনের মধ্যে ৮০ হাজার টাকার বেশি সংগ্রহ করে ফেলেন। আর সে অর্থ আজ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের উপস্থিতিতে হস্তান্তর করা হয়।
আদর্শ একাডেমীর অফিস কক্ষে অনাড়ম্বরপূর্ণ এ সহায়তা হস্তান্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের এ মেলবন্ধনে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি জুলকার নাইন বলেন, “আদর্শ একাডেমী ও আমাদের শিক্ষকদের ভালোবেসে আমরা সবাই মিলে এ উদ্যোগ নিয়েছি। অতি অল্প সময়ের মধ্যে এত শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করাটাও বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে সবশেষে শিক্ষকদের জন্য যতটুকু আমরা ব্যবস্থা করতে পেরেছি তাতে আমরা খুশি। আমাদের এ প্রচেষ্টা শিক্ষকদের সম্মানিত করেছে এবং বিদ্যালয়কে করেছে গৌরবান্বিত। আমরা ভবিষ্যতেও এরকম উদ্যোগ নিয়ে বিদ্যালয়ের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ”।
উপস্থিত শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগ অভুতপূর্ব এবং বিরল বলে আখ্যা দেন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সিনিয়র শিক্ষক নূরুল ইসলাম বলেন, “করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। বিদ্যালয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় আমরা মুগ্ধ এবং আনন্দিত। শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের এ মহানুভবতা ইতিহাস হয়ে থাকবে”। তিনি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সকল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে বলে ঘোষণা দেন।
আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে জুলকার নাইন তহবিলে সংগৃহীত অর্থ শিক্ষকদের নিকট হস্তান্তর করেন যা বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শাখার ১৬ জন শিক্ষকদের মাঝে প্রয়োজনীয়তা অনুসারে বিতরণ করা হয়। এর আগে গত ২১ মে তহবিল থেকে বিদ্যালয়ের ৫জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নগদ অর্থসহ ঈদ এর পণ্য সামগ্রী বিতরন করা হয়।
আদর্শ একাডেমীর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভোলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন এর সভাপতি এবং হোসাইনিয়া প্রি-ক্যাডেট মাদরাসার প্রিন্সিপাল জনাব মুহাম্মদ আব্বাছ উদ্দিন বলেন, “নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। দেশের এ করোনা পরিস্থিতিতে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকেরা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ দুঃসময়ে আদর্শ একাডেমীর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের “বিদ্যালয়ের জন্য ভালোবাসা” উদ্যোগটি স্কুলের শিক্ষকদের বেশ সাহায্য করেছে। দেশের অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে বিদ্যালয়ের পাশে দাঁড়াতে পারেন।”
“বিদ্যালয়ের জন্য ভালোবাসা” উদ্যোগের সমন্ব্য়ক সিরাজুম মুনিরা বিনতে ইসমাইল বলেন, “মূলত বিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকে আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে এ উদ্যোগ নেই। সকলের সহযোগিতা এবং প্রতিটি ব্যাচের প্রতিনিধিদের নিরলস পরিশ্রমের কারনে আমাদের এ উদ্যোগ আজ স্বার্থক হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ঈদের পূর্ব মূহুর্তে শিক্ষকদের কাছে আমাদের ভালোবাসা পৌঁছে দিতে পেরে বেশ খুশি লাগছে। আমরা সকলেই অত্যন্ত আনন্দিত এবং আদর্শ একাডেমীর একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে গর্বিত।” বিদ্যালয়ের যে কোন সংকটে এ ধরনের সহায়তা চলমান থাকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য গত ১০ মে থেকে ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপের মাধ্যমে “বিদ্যালয়ের জন্য ভালোবাসা” উদ্যগটি নেওয়া হয়। আদর্শ একাডেমির ১৯৮২ থেকে ২০১৫ এর সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফুর্তভাবে নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করেন। এ উদ্যোগে প্রতিটি ব্যাচ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন নুসরাত জাহান ঝুমু, আফসানা ফেরদৌসি রোজা, উম্মে হাবিবা তানজিলা মো. মশিউর রহমান মান্না, জিউক্স সাইয়িদ আফ্রিদি,সিয়াম, তাজিম, আফিফ, জিহাদ, আফনান আল আম্মার, মুহাম্মদ যায়ীদ আনজাম , আবদুর রব রাফি, আদনান, তানভীর আহমেদসহ আর অনেকে।