আয়না২৪ প্রতিবেদক
‘শুয়া চান পাখি আমার শুয়া চান পাখি, আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছ নাকি’……… এ গান গেয়েই দারুণ জনপ্রিয় হন বংশীবাদক ও সঙ্গীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী।
গানটির গীতিকার ও সুরকার উকিল মুন্সির স্ত্রীর মতোই চিরদিনের গভীর ঘুমে নিমগ্ন এই খ্যাতিমান সঙ্গীত তারকা। লোকজ ও আধ্যাত্মিক ধারার গানে নিজেকে এমনভাবে তিনি প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন- তার মৃত্যু এই ধারার সঙ্গীতে শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। সে কথাই বলেছেন সঙ্গীতজগতের গুণী ব্যক্তিত্বরাও
ভারতবর্ষ থেকে আসার পরই আমি গান গাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ ওখানে আমি নর্থ ইন্ডিয়ান ক্লাসিক্যাল মিউজিকের সঙ্গে একটা দীর্ঘসময় ব্যয় করি। এ ধারার অনেক গুণী শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয় আমার। এ ধরনের মিউজিকের সঙ্গে আমার একটা আত্মিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে। কিন্তু আমার ভেতরে গাছ-পালার মতো বেড়ে উঠেছে এবং খুব শক্তভাবে শেকড় গেড়ে আছে বাংলা ফোক গান।
নিজে গান গাওয়ার কথা যখন ভাবছিলাম, তখন একদিকে আমাকে ফোক গান খুব টানছিল, অন্যদিকে ক্লাসিকের প্রতি সদ্য গড়ে ওঠা ভালোবাসাও আমাকে খুব হাতছানি দিচ্ছিল। দেশে ফিরে চিন্তা করি, ফোক মিউজিকের সঙ্গে ক্লাসিক মিউজিক পান্স করলে কেমন হয়। এ চিন্তা থেকে আমি কিছু নিরীক্ষাধর্মী গান করি। হুমায়ূন আহমেদের ৪৫তম জন্মদিনে তার বাসায় সবার অনুরোধে কয়েকটি গান শোনাই।
উপস্থিত সবাই বিশেষ করে অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর, ভারত বিচিত্রার বেলাল ভাই, বিটিভির মোস্তাফিজুর রহমান উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং এ ধরনের গানের জন্য ভীষণ উৎসাহিত করেন। তারপর হুমায়ূন আহমেদ তার শ্রাবণ মেঘের দিন ছবিতে আমাকে দিয়ে দুটি গান করান। ‘আমার মনে যত দুঃখ সয়’ এবং ‘শুয়া চান পাখি’ গান দুটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। তারপর শহীদুল্লাহ ফরায়েজী আর আমি মিলে এ ধারার বহু গান করেছি। শ্রোতারা নতুন স্বাদ পেল। গানের কথা ভালো না হলে কোনো গানই মানুষকে টাচ করতে পারে না। কথা হচ্ছে একটা গানের মূল প্রাণ। আমি যেসব গান করি সেগুলোর কথায় কোনো না কোনো মেসেজ থাকে, ফিলোসফিকাল এলিমেন্ট থাকে। কিছু জিনিস আছে জানা যাবে না।
কিছু জিনিস আছে পাঁচমিশালি রান্নার মতো। এখান থেকে যদি প্রতিটি জিনিসকে আলাদা করে রান্না করা হয়, তাহলে যেমন হবে আর কি। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি, ফোকের মধ্যে সব আছে, আমাদের কাজ হচ্ছে সঠিক নির্বাচন
জন্ম : ১৫ নভেম্বর ১৯৫৪
জন্মস্থান : নেত্রকোনা
বাবা-মা : প্রয়াত মহরম আলী ও মা প্রয়াত জহুর-উন-নিসা
ভাই বোন : তিন ভাই এক বোন (সবার ছোট তিনি)
প্রথম গান শোনা : চার বছর বয়সে মায়ের কাছে (শাশুড়িরে কইয়ো গিয়া)
প্রথম বাঁশি বাজান : ৫ বছর বয়সে
গান শেখা শুরু : ৭ বছর বয়স থেকে মায়ের কাছে
প্রথম যে গানের সুর বাঁশিতে তুলেছেন : শ্যাম বিচ্ছেদের একটি সুর : আস্ট আঙুল বাঁশের বাঁশি, মধ্যে মধ্যে ছ্যাদা, নাম ধরিয়া ডাকে বাঁশি, কলঙ্কিনী রাধা (যা পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছিলেন)
প্রাথমিক স্কুল জীবন : নেত্রকোনায় গ্রামের স্কুল
মাধ্যমিক স্কুল : নেত্রকোনা গভর্নমেন্ট হাইস্কুল
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন
বিবাহ : ১৯৮৬ সালে ফরিদা ইয়াসমিনের সঙ্গে
সঙ্গীতের প্রথম ওস্তাদ :
শ্রী গোপাল দত্ত
পরবর্তী সময় যাদের কাছে শিখেছেন : ওস্তাদ আমিনুর রহমান, ভারত বর্ষের বিখ্যাত বংশীবাদক ওস্তাদ পান্না লাল ঘোষ, ওস্তাদ তাগাল ব্রাদার্স, পণ্ডিত দেবেন্দ মুৎসুদ্দী, ওস্তাদ আয়েফ আলী খান মিনকারী, পণ্ডিত বিজি কারনাড
জীবনের প্রথম অর্জন : শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বাংলাদেশ রেডিও টেলিভিশনসহ সম্মিলিত একটি যন্ত্রসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার
ভিজ্যুয়াল মিডিয়ায় প্রথম গান : ১৯৯৫ সালে বিটিভির ‘রং-এর বারৈ’ অনুষ্ঠানে
চলচ্চিত্রে প্রথম গান : হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব : ১৯৯৯ সালে ফ্রান্সে ওয়ার্ল্ড ফ্লুট সম্মেলনে
পেশাগতভাবে বাঁশি বাজানো শুরু করেন : ১৯৮০ সালে,
প্রথম অভিনয় করেন : ‘মাটির পিঞ্জিরা’ ছবিতে
নাটকে প্রথম অভিনয় : ‘পাগলা ঘোড়া’
জনপ্রিয় গান : আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, পূবালী বাতাসে, ওলো ভাবীজান নাউ বাওয়া মরদো লোকের কাম, মানুষ ধরো মানুষ ভজো, শুয়া চান পাখি, আমি তোর পিরিতের মরা, রজনী হইসনা অবসান, চন্দ্রদেবী, আমি একটা জিন্দালাশ, আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে।