আয়না২৪ প্রতিবেদক
ডাইনোসর এখন কেবল মানুষের কল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেই কল্পনা থেকে মানুষ চিত্রিত করেছে কল্পিত ডাইনোসরের ছবি। কিন্তু এখন সেই ডাইনোসর বাস্তবে ফিরে আসবে-ভাবতেই কেমন ছমছম করে ওঠে শরীর। আলোচিত সেই ডাইনোসর নিয়ে আবার আলোচনা ও কৌতূহলের জন্ম দিচ্ছে নতুন কিছু গবেষণা। তাহলে কি পুনরায় ফিরিয়ে আনা যাবে বিলুপ্ত ডাইনোসর? তাহলে কি ফের পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াবে সেই ভয়ঙ্কর মাংসাশী টিরানোসরারা?
সম্ভাবনা বলি আর আশঙ্কা যেটাই বলি না কেন, সেটা দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক দু-একটি আবিষ্কার। জুরাসিক যুগের একটি গাছের কোটরে থাকা অনেকটা হলদে-বাদামি রঙের অ্যাম্বারের মধ্যে মিলেছে মশার জীবাশ্ম বা ফসিল।আর এর মধ্যে অস্বিস্ত মিলেছে প্রাণ সৃষ্টির প্রধান অনুষঙ্গ ডিএনএ। শুধু কি তাই! ডাইনোসরের জীবাশ্মে অন্যত্র অস্বিস্ত মিলেছে রক্তনালী ও কোলাজেন নামে বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন। বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারের মধ্যদিয়ে কৌতূহলেরও জন্ম হয়েছে- কোটি কোটি বছর আগে বিলুপ্ত ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনা যাবে কি না, সে নিয়ে।
তবে সেটা যে একেবারেই অসম্ভব, বিজ্ঞানীরা কিন্তু সে কথা বলছেন না। ‘আজগুবি’ বলেও উড়িয়েও দিচ্ছেন না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিবর্তনের নিয়মেই ডাইনোসরদের পরম্পরা এক সময় পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছিল। এই বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েই উন্নত প্রাণের জন্ম ও বিকাশ হয়েছিল এই পৃথিবীতে। বিবর্তনের সেই ধারার বা গতির কোনো নির্দিষ্ট দিক নেই। নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে, ডাইনোসর যুগ থেকে মানবসভ্যতার দিকে বা তার চেয়ে উন্নততর কোনো প্রাণীর দিকে এগিয়ে চলছে না পৃথিবী।
লন্ডনের নর্দাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনতত্ত্ব গবেষক জামাল নাসির এমন কথাই বলছিলেন। তাঁর মতে, ‘‘ এটা অসম্ভব নয়’। কারণ, বিবর্তন প্রক্রিয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো দিক নেই। সেটা তো এমন নয় যে, তা শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তা কেবল পূর্ব থেকে পশ্চিম কিংবা উত্তর থেকে দক্ষিণে দিকে এগিয়ে চলেছে।প্রশ্ন হলো, বিবর্তনের রথের চাকা কোন দিকে যাবে, তা আগে থেকে নির্দিষ্ট থাকে না। বিবর্তনের গতিপথ একেবারেই পরিকল্পিত না। বরং বলা যায়, তা ভীষণভাবে পাগলাটে। তাই জীবাশ্ম থেকে ডাইনোসরদের একেবারেই ফিরিয়ে আনা যাবে না, এটা মনে করা ঠিক না। আর তার সম্ভাবনাটা ক্ষীর্ণ নয়।’’
জিনতত্ত্ববিদ নাসির এও বলেছেন, ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। আমাদের জিনোমে আচমকা একটা বড় পরিবর্তন ঘটে গেলে সেটা সম্ভব হলেও হতে পারে।
অবশ্য মানতে তাঁর ওই বক্তব্য রাজি নন লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের ভার্টিব্রেট প্যালিয়েন্টোলজিস্ট সুসি মেডমেন্ট। সুসি মেডমেন্ট এ প্রসঙ্গে বলেছেন , ‘অ্যাম্বারের মধ্যে ঠিকই ডাইনোসর যুগের মশার জীবাশ্ম মিলেছে। কিন্তু তাতে মশার জীবন্ত কলার সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই সেখান থেকে ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনা অসম্ভব’।
যদিও অন্যত্র ডাইনোসরের জীবাশ্মে রক্তনালী ও কোলাজেন প্রোটিন পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানেও ডাইনোসরদের প্রকৃত ডিএনএ মেলেনি। বিজ্ঞানীদের মধ্যে এনিয়ে দ্বিধা থাকলেও একাংশের বক্তব্য, কোলাজেন তুলনায় বেশি দিন অবিকৃত থাকতে পারলেও ডিএনএ’র পক্ষে তা অসম্ভব।কারণ, অল্পদিনেই ডিএনএ পানি ও সূর্যালোকে একেবারে বিনষ্ট হয়ে যায়।
গবেষখ সুসি এ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘এখনও পর্যন্ত যে প্রাচীনতম ডিএনএ-র সন্ধান মিলেছে, তার বয়স ১০ লাখ বছর। আর ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়েছে ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর পূর্বে। এজন্য ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের ততটা প্রাচীন ডিএনএর সন্ধান পেতে হবেেআর সেটা পাওয়া গেলেই হয়তো ডাইনোসরদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে’।